শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

জলবায়ু ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
  ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
জলবায়ু ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব কতটা ভীতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জলবায়ুর ঝুঁকিতে- এমন বিষয় বারবার সামনে এসেছে। প্রসঙ্গত, এক যুগ আগেও মনে করা হতো, বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। অর্থাৎ, তীব্র গরমের উষ্ণতম দিনের সংখ্যা এপ্রিল মাসেই বেশি থাকে। কিন্তু আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বছরের উষ্ণতম দিনের সংখ্যা এখন শুধু এপ্রিল মাস তথা গ্রীষ্মকালে সীমাবদ্ধ নেই; বর্ষাকালেও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গ্রীষ্মকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বর্ষাকালেও তাপপ্রবাহ চলা, এই সবকিছু ঘটছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে, তার মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশে। ফলে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উলেস্নখ্য, এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদে সমন্বিতভাবে 'জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা' (ন্যাপ) গ্রহণ করেছিল সরকার। ন্যাপে বলা হয়েছে, ওই ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি বা দুর্যোগের হার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিগুলোর তীব্রতা বাড়ছে বলেই আবহাওয়ার প্যাটার্ন তথা ধরনেরও পরিবর্তন এসেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা আগের তিন দশকের চেয়ে তীব্রভাবে বাড়ছে। অর্থাৎ, ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে এটি ক্রমশ বাড়ছেই। এমনকি গত ত্রিশ বছর ধরে শীতকাল ও বর্ষাকালেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম পড়ছে।

অন্যদিকে, শীতকাল ও বর্ষা পূর্ববর্তী সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। আবার বর্ষা ও বর্ষাপরবর্তী সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে গত ৩০ বছর ধরে উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে বলেও জানা যায়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় নয় লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বলা দরকার, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদনদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ প্রায় প্রতি বছরই এমন অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। আবার দীর্ঘ সময় ধরে চলা শুষ্ক আবহাওয়া, অপর্যাপ্ত বৃষ্টি, বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের পরিমাণ বেশি হলে খরার সৃষ্টি হয়। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা দেয় পানির অভাব। ১৯৬০ থেকে ১৯৯১ সাল, এই সময়সীমার মাঝে বাংলাদেশ মোট ১৯টি খরার মুখোমুখি হয়েছিল। এর মাঝে সবচেয়ে তীব্র ছিল ১৯৬১, ১৯৭২, ১৯৭৬, ১৯৭৯ ও ১৯৮৯ সালের খরা। এরপর ১৯৯৭ সালেও তীব্র খরা দেখা দেয়। সেই খরার কারণে কৃষিতে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি মোকাবিলা করতে হয় বাংলাদেশকে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের 'বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক অ্যাটলাস' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের প্রায় ২২টি জেলা খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ থাকে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনাও বাড়ছে এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। অন্যদিকে, ভূমিধসের ঘটনা ঘটছেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকায় এটা বেশি ঘটে থাকে। সামগ্রিকভাবে যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জলবায়ু ঝুঁকিতে বাংলাদেশ- এই বিষয়টিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং জলবায়ু পরিবর্তজনিত ভয়াবহতাকে আমলে নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে। যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে