বন্ধু নির্বাচনে হতে হবে সতর্ক
প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০
মানুষ তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর থেকে উত্তম সময়গুলো পরিবারের পর বন্ধুদের সঙ্গেই কাটিয়ে থাকে। বন্ধুরা হয় বিপদের সাথী, কষ্টের স্বস্তি, দুঃসময়ের সান্ত্বনা এবং আপন না হওয়া সত্ত্বেও আপন কেউ। জন্মের পর থেকে মৃতু্যর আগ পর্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ মানুষের কাছেই আমরা আমাদের সবকিছু ভাগাভাগি করে থাকি এবং তাদের সঙ্গেই জীবনযাপন করে থাকি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও আমাদের থাকতে হবে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক, নয়তো আমরা তাদের সঙ্গেও নিজেদের সবটুকু দিয়ে বেঁচে থাকতে পারব না। তাই বন্ধুত্ব জিনিসটা পরিবার থেকেই শুরু হয়। তবে একজন মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা থেকে শুরু হয় পরিবারের মানুষের বাহিরে গিয়ে অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানানো। এ ছাড়া নিজেদের আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও বন্ধু এবং বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের মানুষ থাকে। একজন মানুষ কোন পথে পরিচালিত হবে, এর অনেকটাই নির্ভর করে বন্ধু নির্বাচনের ওপর। একটি প্রচলিত কথা রয়েছে যে, সঙ্গ দোষে, লোহা ভাসে। তাই জীবনের গতির সঙ্গে সঙ্গের সম্পর্ক বিদ্যমান। একজন বন্ধুই পারে একজন মানুষকে বেঠিক পথ থেকে সঠিক এবং সঠিক পথ থেকে বেঠিক পথে নিয়ে যেতে। বন্ধুদের মাধ্যমেই আমরা পরিবারের বাহিরে গিয়ে অন্যান্য জ্ঞান আহরণ করে থাকি। বন্ধুদের সাহায্যের মাধ্যমেই কষ্ট থেকে স্বস্তিতে এবং বিষণ্নতা থেকে ফিরে আসা যায়। আবার কখনো বন্ধুরাই হয় বিষণ্নতার কারণ। তাই বন্ধু নির্বাচনে হতে হবে সতর্ক। একজন ভালো বন্ধু পারে একজন বিষণ্নতায় আটকে থাকা বন্ধুকে বিষণ্নতা থেকে ফিরিয়ে আনতে। বন্ধুরা পারে তার মনের না বলতে পারা কথাগুলো শুনে তার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাতে। একজন ভালো বন্ধু পারে পড়াশোনায় আটকে গেলে তাকে সাহায্য করতে। বিপথে গেলে একজন ভালো বন্ধুই একজন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারে। যে কষ্ট আর কথাগুলো পরিবারের মানুষকে বলা যায় না, সেগুলো বন্ধুরাই পারে শুনতে এবং সমাধান করতে। একাকিত্বে ডুবে যাওয়ার সময় একজন বন্ধুই পারে তাকে প্রফুলস্নতা ফিরিয়ে দিতে। বিপদের সময় কেউ পাশে না থাকলেও বিশ্বস্ত বন্ধুরাই থাকে পাশে, করে সাহায্য। ব্যর্থতায় একজন বন্ধুই যোগাতে পারে সাহস আর অনুপ্রেরণা। বন্ধুদের অনুপ্রেরণার মাধ্যমে যেকোনো কঠিন ও অসম্ভব কাজ করা যায় সহজেই। পড়াশোনায় খারাপ এবং যেকোনো অদক্ষ ব্যক্তি বন্ধুদের মাধ্যমেই হতে পারে দক্ষ, যোগ্য এবং পড়াশোনায় উত্তম। যে কাজ একা করা যায় না, সে কাজগুলো বন্ধুদের সাহায্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। বন্ধুরা বৃদ্ধ বয়সে ভর দিয়ে হাঁটা লাঠির মতো পাশে থাকে শেষ সময় অব্দি। ভালো বন্ধুরা সর্বোচ্চ খারাপ সময়ও পাশ কাটিয়ে যায় না, একা করে রাখে না। এদিকে একজন মানুষের জীবন ধ্বংস হতে পারে ভুল বন্ধু বাছাইয়ের কারণে। খারাপ সঙ্গের কারণে একজন ভালো গুণসম্পন্ন ব্যক্তিও খারাপ পথে যেতে সময় নেয় না। বেশিরভাগ মানুষ খারাপ বা ভুল বন্ধু নির্বাচনের মাধ্যমেই খারাপ বা ভুল পথে যাওয়ার জন্য প্রথম পা দেয়। মূলত নেশায় আসক্ত হওয়া, পড়াশোনা থেকে ছিটকে যাওয়া, কিশোর অপরাধে যুক্ত হওয়া, খুন-খারাবি, চুরি, ছিনতাই, দুর্নীতিসহ সব খারাপ কাজেই মানুষ বন্ধুদের মাধ্যমেই প্রথমে করার উৎসাহ, সাহস এবং উপায় খুঁজে পায়। অনেক সময়, ছেলেরা মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মাধ্যমেও বিপথে চলে যায়। প্রথমত ছেলেমেয়ে বন্ধু হওয়ার পর একজন ছেলে বা একজন মেয়ে যখন একজন মেয়েকে বা ছেলেকে পছন্দ করে বসে তখন তাদের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার পর শুরু হয় বিষণ্নতা। তাই ছেলেমেয়ে বন্ধু হওয়ার ক্ষেত্রে হতে হবে সতর্ক। এ ছাড়াও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বদা উপকারী, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক, নিষ্ঠাবান এবং দক্ষ ব্যক্তিকেই বন্ধু করা উচিত। কখনোই নেশায় আসক্ত, পড়াশোনায় খারাপ, গীবতকারী, অসৎ ব্যক্তিরা ভালো বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়। তাই তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বন্ধুরাই পারে বিশ্ব জয়ে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিতে, বন্ধুরাই পারে জয়ের জন্য সর্বশেষ পদক্ষেপে গিয়ে বিফল করে দিতে। বন্ধুরাই পারে বিষণ্নতা থেকে ফিরিয়ে আনতে আবার সুস্থ মানুষকে বিষণ্ন করে দিতে। তাই জীবনের গতি সঠিক রাখতে, জীবন সুন্দর করতে, সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছতে, সঠিক-ভুল নির্বাচন করতে বন্ধু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ভালো থাকা হোক সব বন্ধুরা মিলে। মিনহাজুর রহমান মাহিম শিক্ষার্থী \হইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া