ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে মুক্তি চাই
প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০
নগরবাসীর এক দুর্ভোগের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এক সূচকে উঠে এসেছে, দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে থাকে। প্রতিবছর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে এসব যানবাহন দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিছুতেই যেন আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না। এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহনের জন্য প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক সমীকরণে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। যা দেশের মোট জিডিপির ১.৫ শতাংশের বেশি। এটি শুধুমাত্র আর্থিক হিসাব। প্রতিবছর ফিটনেসবিহীন গাড়ির দুর্ঘটনার ফলে বহু পরিবার তাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে ধ্বংস হচ্ছে। আজ দেশের মহাসড়কগুলো যেনো অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এক সমীকরণে দেখা যায়, দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে মালিকপক্ষ যে রঙ করে থাকে, তা ১০ দিন পর উঠে যায়। কিন্তু প্রতিবছর এসব ব্যয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকে বাস মালিকপক্ষ। সড়কে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহনের জন্য প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। এর ভেতর অন্যতম সড়কে চলাচল করা বাসগুলো। কিছু বাস এতটাই লক্কর-ঝক্কর যে, যাত্রী বহনে অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও যাত্রী পরিবহণ করে চলছে এবং যাত্রীরাও বাধ্য হয়েই এসব বাসে যাতায়াত করছেন। এই তীব্র গরমে ঢাকায় বাসে অধিকাংশ যাত্রীই নিদারুণ কষ্টে চলাচল করে থাকে। এসব গণপরিবহণে বেশি দুর্ভোগে পড়েন শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা। বেশির ভাগ বাসের ছাদ ভাঙা, যা থেকে সূর্যের আলো এসে বাসের ভেতরের গরমের তীব্রতাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অনেক গণপরিবহণে ফ্যান নেই, থাকলেও একটি সচল থাকলে অন্যটি বিকল। এক জড়িপে দেখা, দেশের ২৪% যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য নয়। ফিটনেস নেই ৩৩% বাসের এবং ৫৬% এর নেই স্পিড গভর্নর এর সিল। এই জড়িপই পরিষ্কার করে দেয় যে, আজ দেশের যানবাহনগুলো কতটা শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া এবং বিকট শব্দ পরিবেশ দূষিত করে থাকে। যার ফলে দেশের সাধারণ জনগণ আক্রান্ত হন নানা অসুখ- বিসুখে। অপরদিকে এসব গাড়ির চালকদের বেশিরভাগ অংশেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনেকেই গাড়ির হেল্পার থেকে চালক হয়ে থাকে। এসব ড্রাইভারদের কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সড়ক - মহাসড়কগুলো। এসব চালকদের একটি বড় অংশ গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকে, যার ফলে সড়ক-মহাসড়কে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোর একটি অংশে সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব গ্যাস সিলিন্ডারের বেশির ভাগেরই নেই কোনো মেয়াদ। যার ফলে প্রায়ই এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকে এবং এরই সঙ্গে অনেক যাত্রী হতাহত হয়ে থাকে। এসব ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর আধিপত্য বন্ধ করতে প্রতিনিয়ত তদারকি করতে হবে, লাইসেন্স চেক করতে হবে, সার্টিফিকেট ও সিল সিস্টেম চালু করতে হবে, জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করতে হবে, প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। ফলে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা ও দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রম্নত সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাইনুল ইসলাম অমি শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা