নিত্যপণ্যের বাজার কোনোভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। একেক সময় একেক অজুহাত তুলে বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করে আসছি, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। আলু পেঁয়াজ ডিম ভোজ্যতেল চাল চিনি কাঁচামরিচ নিয়ে কারসাজি করেছেন তারা। ডিম নিয়ে কারসাজি করেছেন কয়েক বার। ১২০ টাকা ডজন ডিম ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে। এখনো বাজারে ডিমের ডজন ১৬০ টাকা।
আশার কথা, মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি, ক্যাশ মেমোতে দাম উলেস্নখ না করা ও এসএমএসের মাধ্যমে সারাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার ভোরে তেজগাঁওয়ের পাইকারি ডিমের আড়তে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এই অভিযান পরিচালনা করেন। এই ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করার সুযোগ না পান।
আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এরা জনগণের স্বার্থের দিকে কখনোই নজর দেন না। এরা বাজার সন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রম্নত ধনী হওয়া যায় সেটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। বাজারে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের অসহায় জনগণকে জিম্মি করে তারা পকেট কাটবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও তারা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলেন। সুযোগ পেলেই তারা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এক সময়ে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজিতে উঠেছিল। ক'দিন আগেও কাঁচামরিচ ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। এখন দাম কিছুটা কমেছে। বর্তমানে আলুর কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দামই চড়া। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে।
বাজারে পণ্যের সংকট নেই, প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। তারপরেও দাম অনেক বেশি। ফলে সংকটে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা ঠিকমতো বাজার করতে পারছে না। সংকটে পড়েছে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণিও। তারা কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না। অনেকে পুঁজি ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। সারা বছর বাজার মনিটরিং করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে এর কোনো বিকল্প নেই।