রাজধানী ঢাকায় বসবাসকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের সংকট ও সমস্যার বিষয় বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গত এক বছরে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। আর যে কারণে বাসযোগ্যের সূচকে আরও তলানিতে নেমেছে ঢাকা। প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের সহযোগী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) দ্য গেস্নাবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স-২০২৪ বলছে- বিশ্বের বাসযোগ্যতার দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান একেবারে শেষের দিক থেকে ষষ্ঠ।
আমরা বলতে চাই, একদিকে জানা যাচ্ছে, গত এক বছরে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি, অন্যদিকে এই কারণে বাসযোগ্যের সূচকে আরও তলানিতে নেমেছে ঢাকা। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। একইসঙ্গে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত 'দ্য গেস্নাবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স-২০২৪' অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭৩টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা বাসযোগ্য নগরীর বৈশ্বিক তালিকায় গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়েছে। গত দুই বছর পর পর ১৬৬তম স্থানে থাকা ঢাকা শহরের এবারের অবস্থান গিয়ে ঠেকেছে ১৬৮-তে।
সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টিও আমলে নেওয়া দরকার, ইআইইউ প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো এবং পরিবেশসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করেছে। ফলে যে বিষয়গুলোর ভিত্তিতে তালিকা করা হয়েছে তা আমলে নেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। লক্ষণীয়, যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে ঢাকা শহরের উন্নয়নে ব্যয়বহুল অনেক প্রকল্প নিয়েছে সরকার। করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলার পর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু তারপরও ১৭৩টি দেশের মধ্যে গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম কেন, তা প্রশ্ন বটে।
এটাও বলা দরকার, বিশ্লেষকদের দাবি, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে বিগত সময়ে বড় ধরনের বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে নগরে সুশাসন, সেবা সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সমন্বয়, উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণের বিষয়কে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর দুর্নীতিমুক্তভাবে নাগরিক পরিষেবা, নগরের উন্নয়নে এলাকাভিত্তিক সাম্যতা, পরিবেশ সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, যানজট, বায়ু-পানিসহ পরিবেশ দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই সমাধান যথাযথভাবে বের করতে না পারার ব্যর্থতায় ডুবিয়েছে ঢাকাকে। আমরা মনে করি, বিশ্লেষকদের এই মতগুলো আমলে নিতে হবে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
বলা দরকার, এর আগে ইআইইউ প্রকাশিত ২০১৯ সালের সূচকে ১৩৮তম, ২০১৮ সালে ১৩৯তম ও ২০২১ সালের সূচকে ১৪০টি শহরের মধ্যে ১৩৭তম অবস্থানে ছিল ঢাকা। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির সময় বিভিন্ন দেশে লকডাউন থাকায় জরিপের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে ২০২০ সালে এই সূচক প্রকাশ করতে পারেনি ব্রিটিশ সাময়িকীটি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, প্রতি বছর বাসযোগ্যতার বিচারে বিশ্বের বড় শহরগুলোর তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। যেখানে স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো- এই পাঁচ সূচকের ওপর ভিত্তি করে তালিকা করা হয়। ফলে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের এই সূচকগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। লক্ষণীয়, নগরবিদরা মনে করেন, ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষের বসবাসের উপযোগী ঢাকা শহরে প্রায় চার গুণ মানুষের বাস। প্রশ্ন হলো- ঢাকার ওপর কেন এত মানুষের চাপ? এছাড়া ভয়ংকর এ পরিস্থিতি থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ শিল্প এলাকা, ডিটেইলড এরিয়া পস্ন্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়ন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নত নৌপরিবহণ খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশ্লেষকরা। ফলে এই বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, নানা খাতের উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। ফলে দেশের রাজধানী ঢাকাকে আরও বাসযোগ্য করে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি প্রত্যাশিত।