পাঠক মত
দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুফল ও কুফল
প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, মানুষের বুদ্ধি কৃত্রিম উপায়ে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপস্থাপন করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম বেস্নচলে পার্কে অ্যালান টুরিংয়ের কাজ শুরু করে। তার যুগান্তকারী কাজ কম্পিউটার বিজ্ঞানের কিছু মৌলিক বিষয় বিকাশে সহায়তা করেছে। ১৯৫০-এর দশকে, টুরিং মনে করেন যে, মেশিনগুলো নিজেদের জন্য চিন্তা করতে পারে কিনা। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে গবেষণায় একটি পুনরুত্থান চিহ্নিত করে, যা উন্নত অ্যালগরিদম, কম্পিউটিং শক্তি বৃদ্ধি এবং বড় ডেটার আবির্ভাবের করা। এরপর, ক্ষেত্রটি নিয়ে ক্রমাগণ গবেষণার পর ডিসেম্বর ২০১৫ সালে, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (অএও) সব মানুষের জন্য উপকারী তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঙঢ়বহঅও প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক গবেষণার পর সবশেষে, এচঞ-১ (২০১৮), এচঞ-২ (২০১৯), এচঞ-৩ (২০২০) এবং ঈযধঃএচঞ (২০২২-২০২৩) আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। জিডিপি-৩ আবিষ্কারের পর থেকে ইন্টারনেট জগতে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন আসে। যা পূর্বে কোনো দিন এমনভাবে দেখা যায়নি। ২০২০ সালে এআই ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ২৫০ মিলিয়ন, বর্তমানে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন। এই বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী তাদের প্রয়োজনীয় কাজ অতি সূক্ষ্ণভাবে অল্প সময় এআই মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে পারছে। বর্তমানে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে বিমান চালানো পর্যন্ত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে কৃষি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে খরচ কমানোর জন্য অটোমেটেড সিস্টেম আবিষ্কার করা হয়েছে। যেখানে এআইয়ের প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে। বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের জটিল সমস্যায় পড়তে হয় না। যে কোনো ধরনের অ্যালগরিদম, ফ্লোচার্ট অথবা প্রমোশন লেটার, রিজাইন লেটার, ডাটা এনালাইসিসসহ সব ধরনের কাজ এআইয়ের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার এখন লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে যেকোনো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার জন্য অল্প সময় যেকোনো ধরনের তথ্য চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে পেয়ে যাচ্ছে। যেকোনো ধরনের অ্যাপিস্নকেশন, সিভি লেখার জন্য আর দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের দোকানে বসে থাকার প্রয়োজন নেই। এখন এক নিমিষে চ্যাট জিপিটির মাধ্যমে লেখা সম্ভব। বর্তমানে গবেষণা করার জন্য চ্যাট ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আগে কল্পনাও করা যায়নি। এ ছাড়াও বিনোদনের ক্ষেত্রেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এআই। বর্তমানে ছোটদের ছবি আঁকানোর ক্ষেত্রে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে এআই। আমরা যদি চিন্তা করি যে, একটি যন্ত্র মানবের কথা, যা কয়েক বছর আগেও চিন্তাভাবনার মধ্যেও ছিল না, কিন্তু বর্তমানে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্র এমনভাবে ডেভেলপমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে, যা হুবহু মানুষের মতো সব কাজই করতে পারে। যা বিজ্ঞানের জগতে এক অনন্য আবিষ্কার। ধরুন, আপনি একটি আবহাওয়া অফিসে চাকরি করেন। আপনার আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের জন্য পূর্বের বিভিন্ন ধরনের ডাটা এনালাইসিস করা প্রয়োজন। তাহলে আপনি এখন কি করবেন? আপনাকে অবশ্যই গবেষণাকৃত ডাটা বিভিন্ন ওয়েবসাইট অথবা আপনার স্স্নাইড অথবা বিভিন্ন কাগজপত্র থেকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু এই কাজ এআইয়ের মাধ্যমে বর্তমানে এক নিমিষেই করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে গবেষণা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব। আবার ধরুন, আপনি একজন চাকরিজীবী। অফিসে যাতায়াতের জন্য আপনার গাড়ি প্রয়োজন, কিন্তু আপনি গাড়ি চালাতে পারেন না। তাহলে সমাধান কি, আপনি কি ড্রাইভার নিয়োগ দিবেন? বর্তমানে এই সমস্যার সমাধানও এআই দিয়ে করা সম্ভব। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এমন সব গাড়ি আবিষ্কার করা হয়েছে, যেখানে চালকের কোনো প্রয়োজন নেই। এআই ব্যবহারের মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চালানো সম্ভব। আবার বিভিন্ন কারণে আপনি বাসার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আপনার বাসায় যন্ত্রপাতি অনেক সময় বন্ধ না করে আপনি অফিসে চলে যান। যার ফলে অফিস থেকে আসার পর ওই যন্ত্রপাতি বন্ধ করতে হয়। যা বাসার জন্য বিপজ্জনক। বর্তমানে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এআই এর কল্যাণে বর্তমানে এমন সব যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হয়েছে, যা অফিসে বসে ঘরে কি হচ্ছে, কোন যন্ত্র চলছে, কোনটা বন্ধ আছে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এআই ব্যবহারে রয়েছে নানাবিদ সুবিধা। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তৈরি হচ্ছে আসক্তি। যার ফলে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে তথ্যের নিরাপত্তা। এআই ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো মুহূর্তে অ্যালগরিদম, ফ্লোচার, কোডিং করা সম্ভব। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের ভুয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে গোপনীয় তত্ত্ব হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব। আবার অতিরিক্ত এর ব্যবহারে ফলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। আমরা জানি, একজন মানুষের মাথায় লাখ লাখ কোষ থাকে, কিন্তু যদি আমরা কোষগুলো ব্যবহার না করি, তাহলে ব্রেন অকেজো হয়ে যায়। যার ফলে মানুষ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। ভালো-মন্দ কিছু বুঝতে পারে না। আবার অতিরিক্ত এর ব্যবহারের ফলে বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ চাকরিচু্যত হচ্ছে। কারণ, মানুষ যে কাজ করতে কয়েক ঘন্টা লাগে, এআই সেই কাজ কয়েক মিনিটের মধ্যেই করে দিচ্ছে। যার ফলে বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগণ ছাড়া সবাই চাকরি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে বেকারত্ব। যা দেশের জন্য অভিশাপ ডেকে আনতে পারে।
সর্বোপরি এআই ব্যবহারে রয়েছে কিছু সফল দিক আবার রয়েছে কিছু কুফল দিক। তাই, যেসব ক্ষেত্রে এআই দ্রম্নতগতিতে কাজ করতে সম্ভব, শুধুমাত্র সেসব ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত। আর যেগুলোতে ব্যবহার করলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রত্যেকটি অঙ্গনে ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেসব ক্ষেত্রে পরিত্যাগ করাই ভালো।
মো. সোহান হোসেন
শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া