কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না সীমান্তহত্যা। আবারও সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশির প্রাণ গেছে। উপজেলার লোহাকুচি সীমান্তে বুধবার গভীররাতে এ ঘটনা ঘটে বলে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ জানান। নিহত নুরুল ইসলাম (৬০) কালীগঞ্জ উপজেলার লোহাকুচি গ্রামের মঈনউদ্দীনের ছেলে।
সীমান্তে হত্যাকান্ড, নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রায়ই কেন ঘটছে, সে এক বিরাট প্রশ্ন। বহু দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা এবং প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সীমান্তহত্যা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি ঘটছে নির্যাতনের ঘটনাও। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তহত্যা বন্ধে নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। মিলেছে আশ্বাসও। কিন্তু এরপরেও একের পর এক সীমান্তহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশিরা।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সীমান্তে চোরাচালান নৈমিত্তিক ঘটনা এবং এর সঙ্গে উভয় দেশের নাগরিকই জড়িত, তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের নাগরিকরা বারবার হত্যাকান্ডের শিকার হয়- যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র কিন্তু এরপরও সীমান্তহত্যা বন্ধ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। বিভিন্ন সময়েই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। এমনকি বিএসএফের নির্যাতনেও মারা গেছেন। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গুলিতে যেন আর কারো প্রাণ না যায়, এর আগে সে ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। এরপরও যখন সীমান্তে হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। তখন বিষয়টি অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। সীমান্তহত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে ভারত বারবার বাংলাদেশকে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। বিজিবির সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও সম্মেলনে সীমান্তহত্যা বন্ধে নানা কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু এরপরও যখন সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে। ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। বন্দুত্বের দৃষ্টান্ত কি এমন?
আমরা চাই, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্যাতন ও হত্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসুক। কেন সীমান্তে হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে- তা আমলে নিয়ে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে ভারতকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
আমরা চাই, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকুক। সে জন্য সীমান্তহত্যা কিংবা নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে। অপরাধ করলে আইন মোতাবেক শাস্তি হবে কিন্তু নির্যাতন কিংবা হত্যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত হতে পারে না। এ ধরনের হত্যাকান্ড বন্ধুসুলভও নয়। এবারের ঘটনাটি আমলে নিতে হবে এবং সামগ্রিকভাবে সীমান্তে হত্যাকান্ড ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।