রাজধানীর জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ নিরসন করুন
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে কিংবা জনজীবনে দুর্ভোগ পোহাতে হবে- এ যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, দেখা যায় একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় স্বাভাবিক জীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রতি বছরই আশ্বাস, নানা প্রকল্প, আর কোটি কোটি টাকা খরচ করেও জলাবদ্ধতার সমাধান হয় না। বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বুধবার সকাল থেকেই কালো মেঘে ঢেকে ছিল ঢাকার আকাশ। আর সাড়ে ৯টা নাগাদ শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি- যা চলে প্রায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আর আড়াই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে নগরজীবনে স্বস্তি এলেও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হয় সব শ্রেণিপেশার মানুষকে। যা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়।
আমরা বলতে চাই, জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি দুর্ভোগসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে- যা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও বিকল্প নেই। এবারের বৃষ্টিতে জলজট সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাহত হয় যান চলাচল। ইঞ্জিনে পানি ঢোকে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এদিন ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজধানীতে। মুষলধারার বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট, হাতিরঝিল, মিরপুর, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ মোড়, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী রোডসহ বেশ কিছু এলাকার বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে পথচারীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি শেষে স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রিকশাচালক, অফিসগামী যাত্রী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, শুধু এবারই নয়, বিভিন্ন সময়েই এই বিষয় আলোচনায় এসেছে- বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে জন দুর্ভোগের কারণই হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ ব্যবস্থা। যেখানে, বৃষ্টির পানি পড়লেই তা আটকে থাকে। জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য যে ড্রেনগুলো আছে তাও ময়লা আর আবর্জনার স্তূপ পড়ে অকার্যকর হয়ে পড়ার বিষয়ও এর আগে আলোচনায় এসেছে। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। জলাবদ্ধতার কারণগুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির হিড়িকসহ নানা কারণে দুর্ভোগ আরো বাড়ে এমন অভিযোগও আছে। ফলে মানুষের এই দুর্ভোগ যদি রাজধানীতে প্রতিবারই সৃষ্টি হয় আর তারপরেও যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! রাজধানীর জলাবদ্ধতা যেভাবে ঘটে চলেছে, তা নিরসনে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ ও যেভাবেই হোক তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
স্মর্তব্য যে, নানা সময় এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে- অল্প বৃষ্টিতেও জলযটে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বৃষ্টি হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বর্ষাকালে নগরের বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সঙ্গত কারণেই জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগের বিষয়টি সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার খবর আসে, আর এতে করে ভোগান্তি কতটা তীব্র হয় সেটাও বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে জনভোগান্তিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জলাবদ্ধতার কারণ আমলে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। যতদিন না সংকট নিরসন হবে এমন জলবাদ্ধতায় নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে- যা কাম্য হতে পারে না। অতীতের ভুলের মাশুল এখন দিতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় নগর গড়ে উঠলে তার নেতিবাচক প্রভাব কত সমস্যাজনক হতে পারে জলাবদ্ধতা তার একটি উদাহরণ। এটা খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার- একটি দেশের প্রধান শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং জনদুর্ভোগ বাড়ে। রাজধানীবাসীকে জলাবদ্ধতার এই অভিশাপমুক্ত করতে হলে বিচক্ষণতার সঙ্গে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। ফলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রাজধানীবাসীকে বাঁচাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।