রাসেলস ভাইপার (জঁংংবষষ্থং ঠরঢ়বৎ), বৈজ্ঞানিক নাম উধনড়রধ ৎঁংংবষরর, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায় এবং এটি অত্যন্ত বিষাক্ত এক প্রকার সাপ। এটি ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে দেখতে পাওয়া যায়। রাসেলস ভাইপারের নামকরণ করা হয়েছে স্কটিশ প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নামে, যিনি প্রথম এই প্রজাতিটি চিহ্নিত করেছিলেন।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
আকার: সাধারণত ১ থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
রঙ:বাদামি বা ধুসর রঙের গায়ে গোলাকার দাগ থাকে।
মাথা: ত্রিভুজাকৃতি এবং চোখে উলস্নম্ব পিউপিল থাকে।
বাসস্থান:রাসেলস ভাইপার প্রধানত শুষ্ক এবং আর্দ্র অঞ্চল, তৃণভূমি, গুল্মপূর্ণ এলাকা এবং চাষাবাদের জমিতে বসবাস করে। এরা সাধারণত মানুষের আবাসস্থলের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে।
আচরণ:দিনের বেলায় সাধারণত শীতল স্থানে বিশ্রাম নেয়। রাতে শিকার করতে বের হয়। এরা প্রধানত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং সরীসৃপ খায়। হুমকি অনুভব করলে এরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং দ্রম্নত কামড়াতে পারে।
বিষ:রাসেলস ভাইপারের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এটি মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। বিষের প্রভাবে তীব্র ব্যথা, রক্তচাপ হ্রাস, রক্তজমাট বাধা এবং কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এর কামড়ের কারণে মৃতু্য ঘটতে পারে। রাসেলস ভাইপারের কামড়ের পর তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। অ্যান্টিভেনম এবং অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
রাসেলস ভাইপারের মতো দেখতে অন্যান্য সাপ :রাসেলস ভাইপারের মতো দেখতে হুবহু কিছু সাপ রয়েছে যেগুলোর সঙ্গে এটি সহজেই বিভ্রান্ত সৃষ্টি করতে পারে। এদের মধ্যে কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য সাপের পরিচিতি ও তাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো :
শঙ্খচূড় (ঈড়সসড়হ কৎধরঃ)
বৈজ্ঞানিক নাম: ইঁহমধৎঁং পধবৎঁষবঁং
বিবরণ: শঙ্খচূড় সাধারণত কালো বা গাঢ় নীল রঙের হয় এবং সারা দেহজুড়ে সাদা বা হলুদ দাগ থাকে। এদের দেহ সরু এবং মসৃণ।
বিষ: শঙ্খচূড়ের বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত, প্রধানত নিউরোটক্সিন, যা স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে।
বাসস্থান: ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলংকায় পাওয়া যায়।
খৈয়া গুইসাপ (ওহফরধহ ঈড়নৎধ)
বৈজ্ঞানিক নাম: ঘধলধ হধলধ
বিবরণ: খৈয়া গুইসাপের দেহ মসৃণ এবং সাধারণত বাদামি, কালো বা হালকা রঙের হয়। মাথায় 'মেঘ' আকৃতির চিহ্ন থাকে।
বিষ: এই সাপের বিষ নিউরোটক্সিক এবং কার্ডিওটক্সিক, যা স্নায়ু ও হৃদযন্ত্রে প্রভাব ফেলে।
বাসস্থান: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলংকায় সাধারণত দেখা যায়।
রেটিকুলেটেড পাইথন (জবঃরপঁষধঃবফ চুঃযড়হ)
বৈজ্ঞানিক নাম: চুঃযড়হ ৎবঃরপঁষধঃঁং
বিবরণ: এই সাপটি লম্বায় বড় হয় এবং দেহে জটিল ও সাদা, কালো এবং হলুদ রঙের চিত্র থাকে। যদিও এটি বিষহীন, তবে আকারে বড় হওয়ায় বিপজ্জনক হতে পারে।
বিষ: রেটিকুলেটেড পাইথন বিষহীন।
বাসস্থান: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়।
ভারতীয় পাইথন (ওহফরধহ চুঃযড়হ)
বৈজ্ঞানিক নাম: চুঃযড়হ সড়ষঁৎঁং
বিবরণ: দেহ বড় ও মোটা, মসৃণ এবং সাধারণত হালকা বাদামি বা হলুদাভ রঙের হয়, যার ওপর গাঢ় রঙের দাগ থাকে।
বিষ: ভারতীয় পাইথন বিষহীন।
বাসস্থান: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলংকায় পাওয়া যায়।
সো সাপ (ঝধ-িংপধষবফ ঠরঢ়বৎ)
বৈজ্ঞানিক নাম: ঊপযরং পধৎরহধঃঁং
বিবরণ: এই সাপটি ছোট আকারের এবং দেহে সাদা বা হলুদ রঙের আড়াআড়ি দাগ থাকে। এর ত্বকে কর্কশ আঁশ থাকে, যা আড়াআড়িভাবে সাজানো।
বিষ: বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী হেমোটক্সিক যা রক্তে প্রভাব ফেলে।
বাসস্থান: ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
মালাবার পিট ভাইপার (গধষধনধৎ চরঃ ঠরঢ়বৎ)
বৈজ্ঞানিক নাম: ঞৎরসবৎবংঁৎঁং সধষধনধৎরপঁং
বিবরণ: দেহে সবুজ, হলুদ বা বাদামি রঙের মিশ্রণ থাকে এবং এর শরীরে বিভিন্ন রকমের দাগ ও চিত্র থাকে। এটি গাছে বসবাসকারী সাপ।
বিষ: এই সাপের বিষ হেমোটক্সিক এবং মাঝারি মাত্রার।
বাসস্থান: ভারতের পশ্চিমঘাট অঞ্চলে পাওয়া যায়।
এই সাপগুলো রাসেলস ভাইপারের সঙ্গে মিল থাকার কারণে অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এদের প্রতিটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও আচরণ রয়েছে, যা তাদের শনাক্ত করতে সহায়ক।
প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপারের প্রয়োজনীয়তা:
রাসেলস ভাইপার, প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে, বাস্তুতন্ত্রের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিম্নরূপ:
খাদ্য শৃঙ্খলে ভূমিকা
শিকারি: রাসেলস ভাইপার প্রধানত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, এবং অন্যান্য সরীসৃপ খেয়ে থাকে। এর ফলে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত প্রজনন প্রতিরোধ হয়।
শিকার: রাসেলস ভাইপারও অন্যান্য বড় শিকারি প্রাণীর খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এটি খাদ্য শৃঙ্খলে মধ্যবর্তী স্তরে অবস্থিত।
কৃষিতে উপকারিতা
রাসেলস ভাইপার কৃষি জমিতে ইঁদুর এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক প্রাণী নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইঁদুর ফসলের জন্য ক্ষতিকর এবং এর নিয়ন্ত্রণে রাসেলস ভাইপারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
জীববৈচিত্র্য
রাসেলস ভাইপার জীববৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে পরিবেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন প্রজাতির সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কিত এবং তাদের মধ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চিকিৎসা গবেষণা
রাসেলস ভাইপারের বিষ থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের কাজ চলছে। এর বিষে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদান থেকে রক্ত জমাট বাঁধা রোধক ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী তৈরি হতে পারে।
শিক্ষামূলক ও গবেষণার কাজ
রাসেলস ভাইপারের মতো বিষাক্ত সাপ নিয়ে গবেষণা বিজ্ঞানীদের বিষক্রিয়া, প্রতিষেধক এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। এর মাধ্যমে মানবদেহে বিষক্রিয়ার প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
রাসেলস ভাইপার অবাধ নিধনের ফলে বাস্তুতন্ত্রে নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে :
রাসেলস ভাইপার অবাধে নিধন হলে বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য প্রভাব নিম্নরূপ :
খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্য জাল ভাঙন
ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি : রাসেলস ভাইপার ইঁদুর ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সাপের সংখ্যা কমে গেলে এই ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, যা কৃষি জমিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।
খাদ্য শৃঙ্খল ভাঙন: রাসেলস ভাইপার খাদ্য শৃঙ্খলের মধ্যবর্তী স্তরে অবস্থান করে। এটি কমে গেলে খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়তে পারে, যার ফলে অন্যান্য শিকারি ও শিকার প্রাণীর সংখ্যা ও কার্যকারিতা পরিবর্তিত হতে পারে।
জীববৈচিত্র্যে প্রভাব
প্রজাতির ভারসাম্যহীনতা: রাসেলস ভাইপার কমে গেলে এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রজাতিগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে অন্যান্য প্রজাতির ওপর চাপ বাড়বে এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
জীববৈচিত্র্যের হ্রাস: রাসেলস ভাইপার কমে গেলে এর প্রাকৃতিক শিকারিরা খাদ্যের অভাবে সংকটে পড়তে পারে, যার ফলে শিকারি প্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে।
পরিবেশগত স্বাস্থ্য
রোগের বিস্তার: ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এরা বিভিন্ন রোগের বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে, যা মানবস্বাস্থ্য ও অন্যান্য প্রাণীর স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করতে পারে।
পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা: রাসেলস ভাইপার পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি কমে গেলে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, যা মাটি, পানি এবং উদ্ভিদের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কৃষি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষিতে ক্ষতি: ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে, যা কৃষকদের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পেস্ট কন্ট্রোল খরচ বৃদ্ধি: রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা কমে গেলে ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পেস্ট কন্ট্রোল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হতে পারে, যা অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল।
রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে অন্যান্য প্রজাতির সাপ নির্বিচারে নিধনের প্রভাব :
রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে অন্যান্য প্রজাতির সাপ নির্বিচারে নিধন বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হিসেবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
নির্বিচারে সাপ নিধন কিছু উলেস্নখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে:
খাদ্য শৃঙ্খলে প্রভাব
ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি: সাপ বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রাণী যেমন ইঁদুর, পোকামাকড় এবং অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। সাপের সংখ্যা কমে গেলে এই প্রাণীগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে, যা কৃষি ও গৃহস্থালিতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
খাদ্য শৃঙ্খল ভাঙন: সাপ খাদ্য শৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ স্তর দখল করে। নির্বিচারে সাপ নিধন খাদ্য শৃঙ্খলের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যার ফলে শিকারি ও শিকার প্রাণীর মধ্যে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
জীববৈচিত্র্যে প্রভাব
প্রজাতির হারানো: নির্বিচারে সাপ নিধন নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিলুপ্তি ঘটাতে পারে। এতে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায় এবং বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা: সাপ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। সাপের অভাব অন্যান্য প্রাণী এবং উদ্ভিদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে।
পরিবেশগত স্বাস্থ্য
রোগের বিস্তার: সাপ ইঁদুর এবং অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যারা রোগের বাহক হতে পারে। সাপ কমে গেলে ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর মাধ্যমে রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশগত সমস্যা : সাপের অভাবে ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে মাটির স্বাস্থ্য, পানি সংরক্ষণ এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি প্রভাবিত হতে পারে।
কৃষি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
ফসলের ক্ষতি: সাপ ইঁদুর এবং অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করে যা ফসলের ক্ষতি করে। সাপ কমে গেলে এই প্রাণীগুলোর সংখ্যা বেড়ে যায়, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পেস্ট কন্ট্রোল খরচ বৃদ্ধি : সাপ কমে গেলে ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পেস্ট কন্ট্রোল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, যা অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল।
মানবস্বাস্থ্যে প্রভাব
সাপের কামড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি: নির্বিচারে সাপ নিধনের কারণে সাপ মানুষের কাছাকাছি চলে আসতে পারে, ফলে সাপের কামড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
ভীতি ও আতঙ্ক: সাপ নিধনের কারণে মানুষের মধ্যে ভীতি এবং আতঙ্ক বৃদ্ধি পেতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে।
শিক্ষামূলক ও গবেষণার গুরুত্ব
গবেষণার ক্ষতি: সাপের সংখ্যা কমে গেলে সাপ সম্পর্কিত গবেষণা ও শিক্ষার জন্য উপযুক্ত নমুনা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যা বিজ্ঞানীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
প্রাকৃতিক সংরক্ষণে বাধা: সাপের গুরুত্ব বোঝার জন্য শিক্ষার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সাপ নিধন এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে।
সাপের কামড় এর প্রাথমিক চিকিৎসা ও করণীয়:
প্রাথমিক চিকিৎসা।
শান্ত থাকা এবং দংশিত ব্যক্তিকে শান্ত রাখা:
দংশিত ব্যক্তিকে শুয়ে রেখে শান্ত রাখতে হবে। আক্রান্ত স্থান যতটা সম্ভব নড়াচড়া না করার চেষ্টা করতে হবে।
আক্রান্ত স্থানকে স্থির রাখা:
আক্রান্ত অঙ্গকে স্থির রাখতে হবে এবং হৃদপিন্ডের স্তরের নিচে রাখতে হবে।
আক্রান্ত স্থান ব্যান্ডেজ বা বেঁধে ফেলা উচিত নয়:
আক্রান্ত স্থানে কোনো ধরনের ব্যান্ডেজ বা ঘের দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দিতে পারে।
কামড়ানো জায়গা চুষে বিষ বের করার চেষ্টা না করা:
এটি করার ফলে আক্রান্ত স্থানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি ও যে ব্যক্তি বিষ চুষে বের করার চেষ্টা করছে, তারও ক্ষতি হতে পারে।
পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থান ঢেকে রাখা:
আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কাটা জায়গা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা যেতে পারে।
তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া:
যত দ্রম্নত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বিষক্রিয়া নিরোধক ওষুধ প্রাপ্তি দ্রম্নততম সময়ে নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যান্য করণীয়
সঠিক সাপ চিহ্নিত করা:
সাপটি কি ধরনের ছিল সেটা শনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে, তবে অবশ্যই সাপটির কাছে না যাওয়া এবং কোনো ঝুঁকি না নেওয়া।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছে সঠিক তথ্য প্রদান:
চিকিৎসকদের কাছে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে, যেমন সাপের রঙ, আকার, এবং ঘটনাস্থল।
প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অ্যান্টিভেনম প্রদান:
চিকিৎসকরা বিষক্রিয়া নিরোধক অ্যান্টিভেনম প্রদান করবেন। এটি বিষের প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।
পরবর্তী চিকিৎসা:
আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সুস্থ হয়ে উঠেন, তবুও কিছু দিন পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
জঙ্গলে বা সাপের বাসস্থানের আশপাশে সতর্ক থাকা :
জঙ্গলে বা সাপের বাসস্থানের আশপাশে চলাফেরা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং পা ঢেকে রাখার জন্য জুতা পরা উচিত।
বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার রাখা:
বাড়ির আশপাশে আবর্জনা জমতে না দেওয়া এবং ঘাস বা জঙ্গল পরিষ্কার রাখা যাতে সাপ বাসা না বাঁধতে পারে। সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা এবং দ্রম্নত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে সর্পদংশনের মারাত্মক পরিণতি থেকে বাঁচা সম্ভব।
তাই সাপ নির্বিচারে নিধন না করে, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, যাতে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য বজায় থাকে।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল : লেখক ও চিকিৎসক