তামাক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে প্রায় ২০ রকমের ক্যানসার হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুলস্নাহ। মঙ্গলবার সকালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হাসপাতালটির সভাকক্ষে 'বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণ: সফলতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়' শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, তামাকের মধ্যে ভালো কিছুই নেই। এর সবটাই খারাপ। মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের ব্রেন, কিডনি, হার্ট, চোখ, লিভার তামাকের কারণে প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তামাকের মধ্যে প্রায় সাত হাজার কেমিক্যাল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি উপাদন সরাসরি ক্যানসারের জন্য দায়ী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ প্রত্যয় পূরণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে এবং প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ধূমপান ও তামাক সেবনের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানা অসংক্রামক রোগ দেখা দেয়। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর দেশে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃতু্যবরণ করে। তামাকজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় এ খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। যা আরও অধিক ক্ষতিকর। 'তামাক থেকে দূরে সরি, সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়ি' এমন কথা প্রায়ই উচ্চারিত হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। মূলত তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। যেখানে রয়েছে উদ্ভাবনী কৌশল, সুগন্ধি ব্যবহার ও আকর্ষণীয় ডিজাইন। এতে কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে এসব তামাকপণ্যের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বাড়ছে- যা তরুণ প্রজন্মের জন্য উদ্বেকজনক। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ৩০০ টাকা জরিমানা। তা সত্ত্বেও মানুষ প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। বাসের চালক হেলপারও প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। যেন দেখার কেউ নেই। প্রতিবাদ করলেও কোনো ফল হয় না। হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন পাবলিক পেস্নস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) থাকলেও অধূমপায়ীদের পাশাপাশি সেবাকর্মীরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
মনে রাখতে হবে, তামাক সেবনের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, আমাদের সামনে এটি একটি বড় মাইলস্টোন। এই লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে ধাপে ধাপে আমাদের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে।