১৩ দিনে ঝরল ২৬২ প্রাণ সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি
প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। সদ্য বিদায়ী ঈদুল আজহার আগে ও পরে ১৩ দিনে (১১-২৩ জুন) সারাদেশে ২৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬২ জন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৩২ ও শিশু ৪৪ রয়েছে। এ সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে। ১৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে ১২৯টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০৪ জন- যা মোট নিহতের ৩৯.৬৯ শতাংশ। সোমবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো 'ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে' এসব তথ্য পাওয়া যায়। ১৩ দিনের দুর্ঘটনায় ৯৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৩৩টি। এর মধ্যে বাস ৭১টি, ট্রাক ৫২টি, কাভার্ড ভ্যান ১০টি, পিকআপ ১৩টি, ট্রাক্টর ৮টি, ড্রামট্রাক ৯টি, ট্রলি ৩টি, কার্গো ট্রাক ২টি, ট্যাংক লরি ২টি, মাইক্রোবাস ১৬টি, প্রাইভেটকার ১৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ২টি, জিপ ৩টি, মোটর সাইকেল ১৩৮টি, থ্রি-হুইলার ১০৬টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৩টি, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ১৯টি এবং অজ্ঞাত গাড়ি ১৮টি। দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৬.৩৭ শতাংশ, সকালে ২৩.১০ শতাংশ, দুপুরে ২৭.৪৯ শতাংশ, বিকালে ১৭.১৩ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৫.৫৭ শতাংশ এবং রাতে ২০.৩১ শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত অবৈধ চালক ও চালকের অসতর্কতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও খামখেয়ালিপনা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও সড়ক-মহাসড়কের ভঙ্গুর অবস্থা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তেমন ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ ও রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।