গ্যাস সংকট চরমে যথাযথ উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
মে মাসে শুরু হওয়া গ্যাস সংকট এখনো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, দেশজুড়ে গ্যাস সংকট চরমে উঠেছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তথ্য মতে, ঈদের পর বিশেষ করে শিল্পকারখানাগুলোতে সরবরাহ নেমেছে চাহিদার ২০ শতাংশে। গ্যাসের লাইনগুলোতে যেখানে ১৫ পিএসআর গ্যাসের চাপ থাকার কথা সেখানে গ্যাসের চাপ রয়েছে ২ থেকে ৩ পিএসআরএ। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন। একই অবস্থা বিদু্যতেরও, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাসের সরবরাহ করা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় বন্ধ ডজনখানেক বিদু্যৎকেন্দ্র।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিতে হবে, একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন এটা যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই, তেমনি আমলে নেওয়া দরকার শিল্পে গ্যাস না পাওয়ায় বিপর্যস্ত রপ্তানিমুখী পোশাক খাত। দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে ডায়িং ও নিটিং মিলগুলো। যা গ্যাস মিলছে তা দিয়ে কোনোমতে ফিনিশিং কারখানাগুলো চালু রেখে অর্ডারকৃত পোশাকগুলো তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া গ্যাসের সমাধান চেয়ে দফায় দফায় সরকারি সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। তাই উৎপাদন চালু রাখতে এলপিজি ও সিএনজি সিলিন্ডার দিয়ে কোনো মতে কাজ সারছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু তিতাসের হস্তক্ষেপে সেটাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে খবরে উঠে এসেছে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শিল্পসহ দেশের বিদু্যৎ খাতে গ্যাসের সংকট দীর্ঘদিনের। এর আগেও গ্যাস সংকট সংক্রান্ত নানা ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। জানা যাচ্ছে, দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দিনে ৩ হাজার ৮শ' মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ রয়েছে ২ হাজার ৫শ' মিলিয়ন ঘনফুটের আশপাশে। যার মধ্যে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ আসে আমদানিকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) থেকে। কিন্তু গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত টার্মিনালটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। ফলে চলমান গ্যাস সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।
স্মর্তব্য যে, এর আগে গ্যাস সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলেছিলেন- দ্রম্নত সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। এখন যখন গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে তখন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আমরা মনে করি, চলমান গ্যাস সংকট আমলে নেওয়া এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটাও এড়ানো যাবে না, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন নিম্নমুখী। খবরেও উঠে এসেছে যে, গত দুই বছর ধরে স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতির দিকে রয়েছে। আর এর ফলে চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাসের ঘাটতি এমনিতে রয়েছে। এ অবস্থায় আমদানিকৃত এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। শুধু তাই নয়, গ্যাসের অভাবে কাঙ্ক্ষিত বিদু্যৎ উৎপাদন না হওয়ায় ঢাকার বাইরে নিয়মিত বিরতিতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিদু্যৎ বিভাগকে। আর এতে বিদু্যৎ নির্ভর স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর উৎপাদনও স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চলমান গ্যাস সংকটের সার্বিক অবস্থা আমলে নিতে হবে। মে মাসে শুরু হওয়া গ্যাস সংকট এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং ঈদের পর বিশেষ করে শিল্পকারখানাগুলোতে সরবরাহ নেমেছে চাহিদার ২০ শতাংশে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া শিল্পে গ্যাস না থাকায় 'হেভি ইউনিট' দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। ফলে পোশাক খাতে অন্তত ২০ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। যার ফলে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক তা আমলে নিতে হবে। এর আগে, আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি রপ্তানি বাজার হারানোর শংকাও উঠে এসেছিল গ্যাস সংকটের কারণে। ফলে যখন দেশজুড়ে গ্যাস সংকট চরমে বলে জানা যাচ্ছে, তখন সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। গ্যাস সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।