পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আর এটা এড়ানো যাবে না যে, মানুষ পানিবন্দি হলে তার ফলে জীবনযাপনে কতটা বিপর্যয় নেমে আসে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, এরই মধ্যে সিলেটে ৯ লাখ, সুনামগঞ্জে ছয়, মৌলভীবাজারে তিন ও হবিগঞ্জে এক লক্ষাধিক বানভাসি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমলে নিতে হবে একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। এটাও জানা গেছে, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন, তাদেরও পর্যাপ্ত খাবার মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এসব কেন্দ্রে খাবার সরবরাহ চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। বানের পানিতে ডুবে শিশুসহ তিনজনের মৃতু্য হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে দুই দফায় বন্যাকবলিত অঞ্চল সিলেটে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। দুর্গতদের পাশে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অথচ গত টানা পাঁচ দিনে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটার। বৃষ্টি কমায় সিলেটের কোথাও পানি কমেছে আর কোথাও বেড়েছে। কুশিয়ারা ছাড়া সবক'টি নদ-নদীর পানিই কমছে বলেও জানা গেছে। কিন্তু এটা এড়ানো যাবে না যে, সুরমা নদী সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে ও কানাইঘাট পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে শুক্রবারের খবরে জানা গেছে। অন্যদিকে শঙ্কামুক্ত নন সিলেটের বানভাসিরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ১২ ঘণ্টায় সুরমা, সারি, গোয়াইন, ডাউকি নদীর পানি কমেছে। তবে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলছে সুরমা। এ অঞ্চলেও মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখ লাখ বানভাসি। অনেকে ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আশ্রিতদের অভিযোগ, তারা সেখানে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না। ফলে খাবারের বিষয়টি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
জানা যায়, বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল যেমন ভেসে গেছে, তেমনি বাজার, দোকানপাট, বাসাবাড়ি ও অলিগলি তলিয়ে গেছে পানিতে। সামগ্রিকভাবে যে তথ্য ওঠে আসছে তাতে পানিবন্দি মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। যদিও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্নাকরা ও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, অভিযোগ আমলে নেওয়া এবং বিতরণ করা খাবারসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পর্যাপ্ত কি না তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী কম এমন অভিযোগও ওঠে এসেছে।
আমরা বলতে চাই, পানিবন্দি দশা কিংবা বন্যার মতো পরিস্থিতিতে, পানিবাহিত রোগবালাই এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়- এটিও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কতটা চরমে ওঠে। দেশের বিভিন্ন সময়ের বন্যা পরিস্থিতি কিংবা পান্দিবন্দি দশায় মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে সেটি নানা সময়েই জানা গেছে। নানা ধরনের ফসল ডুবে যায়। শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকটও তৈরি হয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। যে অভিযোগগুলো ওঠে এসেছে তা খতিয়ে দেখে যেমন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। তাই মনে রাখা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। ফলে সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।