সড়কে মৃতু্যর মিছিল কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে সড়কে মৃতু্যর মিছিলে যোগ হয়েছে আরও অন্তত ১৮টি প্রাণ। তথ্য মতে, দেশের ১১ জেলায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ জন, মুন্সীগঞ্জে ২ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২ জন, খুলনায় ২ জন, কক্সবাজারের চকরিয়ায় ২ মোটর সাইকেল আরোহী, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে অ্যাম্বুলেন্সের চালক, শেরপুরের নকলায় পথচারী, নওগাঁর পোরশায় আদিবাসী নারী, নেত্রকোনার পূর্বধলায় একজন ও খাগড়াছড়িতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। উলেস্নখ্য যে, সোমবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা বলতে চাই, যখন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। লক্ষণীয়, জানা যাচ্ছে যে, এবারের দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে, প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে, মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে, যাত্রীবাহী কোচ অ্যাম্বুলেন্সর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে, রাস্তা পারাপারের সময় যাত্রীবাহী বাসের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বিবেচনায় নেওয়া দরকার, এর আগে বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাবসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, কেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না, কেন বাড়ছে লাশের সংখ্যা- এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া প্রায় প্রতি বছরই ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সামনে আসে যা অত্যন্ত উদ্বেগের। স্মর্তব্য, এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছ যে, সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় মৃতু্যর মিছিল থামছে না। বরং সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন- দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃতু্য কমছে না। একই সঙ্গে পথচারী ও যানবাহন চালকদের অসচেতনতা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা। ফলে, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে সড়কে মৃতু্যর মিছিলে যোগ হয়েছে আরও অন্তত ১৮টি প্রাণ- যা আমলে নিতে হবে। আর এটাও মনে রাখতে হবে যে, নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে, একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।