পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের মধ্যে সমাগত। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এ ঈদ। মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি প্রিয় বান্দা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার ছেলে হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা এবং গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইব্রাহিম (আ.)-কে আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কোরবানি করতে নির্দেশ দান করেন। এ ঘটনার পর থেকে মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য কারোর মধ্যেই যেন চেষ্টা ও আন্তরিকতার অভাব থাকে না। যখন ঈদের আগমনী সুর চারদিকে বেজে ওঠে, তখন ছোট-বড় সবার মনে আনন্দের বাতাস বইতে শুরু করে। নাড়ির টানে মানুষ ছুটে চলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। প্রিয়জনের জন্য নানারকম উপহার কেনে, প্রিয়মুখের হাসি দেখার জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। নিজ ঘরে কিংবা গ্রামে ফেরার সে যে কী ব্যাকুলতা- তা ঈদ আসলে যেন হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। মানুষ ছুটে চলে তার আপন ঠিকানায়- জন্মভূমিতে।
যদিও বলা দরকার, এর আগে ঈদের আনন্দকে মস্নান করে দিয়েছিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রায় প্রত্যেকটি খাতে করোনার থাবা পড়েছিল। বিপর্যস্ত হয়েছিল অর্থনীতি, বিঘ্নিত হয়েছিল মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে সবকিছু যখন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছিল, তখন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পৃথিবীকে নতুন করে সংকটে ফেলে। ফলশ্রম্নতিতে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে জীবনযাপনসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যয় সংক্রান্ত শঙ্কা উঠে আসে।
প্রসঙ্গত, এটাও বলা দরকার, ঈদকে কেন্দ্র করে নাড়ির টানে ফিরতে নানা ধরনের বিড়ম্বনা-দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর কারণ মূলত ঈদের সময় যাত্রীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। এ সময় নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগও ওঠে। ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে সড়ক মেরামতের কাজও যানবাহনের গতি আরও শ্লথ করে। এবারেও যাত্রী ভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা ওঠে এসেছে। বিশেষ করে চার লেন ও ওভারপাসের নির্মাণকাজ, ঈদের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পূর্ব প্রান্তের সেই ৮ কিলোমিটার অংশ এবং সড়কের ১৮টি সেতুতেও যানজটের আশঙ্কা আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও কমবেশি যানজটের আশঙ্কা আছে এমনটি জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, ঈদযাত্রাকে স্বস্তিকর এবং নির্বিঘ্ন করতে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। এবারে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ২২টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। সঙ্গত কারণেই এসব নির্দেশনা যেন মানা হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
বলা দরকার, মানুষ উৎসব-আনন্দে গ্রামে যায় নাড়ির টানে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা বিড়ম্বনা আতঙ্ক উপেক্ষা করে। কেননা ঈদে মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে চায়। এ যেন দৃঢ়চেতা অদম্য মানসিকতা। এ টান যে বড় বেশি প্রাণের। ফলে ঈদযাত্রায় যেন দুর্ভোগ না হয়, ভোগান্তি না হয়, সেই দিকটি আমলে নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
এটাও আমলে নেওয়া দরকার, ঈদুল আজহার শিক্ষা ভোগের নয়, ত্যাগের। মুসলমানরা এ ঈদের মাধ্যমে আলস্নাহর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য, তার সন্তুষ্টি ও মানবকল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ প্রদর্শন করে। ত্যাগ ও কোরবানির মধ্যেই যে অনাবিল সুখ, শান্তি ও প্রকৃত সমৃদ্ধি রয়েছে তার প্রতিফলন ঘটুক সমাজে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। পবিত্র ঈদুল আজহার এই আগমনে সবাই ভেদাভেদ, হিংসা ভুলে ঈদের আনন্দকে হৃদয়ে ধারণ করুক এমনটি কাম্য। ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দের। যায়যায়দিনের সব পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপন দাতা, এজেন্ট, হকার ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।