প্রায়ই অভিবাসীদের মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর চেষ্টায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রায় পাঁচ হাজার অভিবাসীর মৃতু্য হয়েছে, যা নজিরবিহীন। অভিবাসনবিষয়ক অধিকার গোষ্ঠী 'ওয়ার্কিং বর্ডারস' এর বুধবারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই উলেস্নখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মের মধ্যে মরক্কো, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল ও গাম্বিয়া থেকে ক্যানারি যাওয়ার পথে আটলান্টিক মহাসাগরে ৪ হাজার ৮০৮ জনের মৃতু্য হয়েছে। ৯৫ শতাংশ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃতু্যর মধ্য দিয়ে আফ্রিকা ও স্পেনের মধ্যবর্তী এই জলপথটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী রুটে পরিণত হয়েছে। স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে দ্বীপপুঞ্জে আগত অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেড়ে ১৬ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। একই সময় আলজেরিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে যাওয়ার ভূমধ্যসাগরীয় রুটটিতে মৃতু্য হয় ১৭৫ জন অভিবাসন প্রত্যাশীর; যা এটিকে দ্বিতীয় প্রাণঘাতী জলপথে পরিণত করেছে। মরক্কো থেকে স্পেনকে পৃথককারী জিব্রাল্টার প্রণালি ও পাশের আলবোরান সাগরে আরও ৭১ জনের মৃতু্য হয়েছে। ফলে স্পেনে যাওয়ার পথে মারা যাওয়া মোট অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩৩ জন।
বিভিন্ন দেশ যেন সমুদ্রে নিরাপত্তা নীতি এবং জীবনের সুরক্ষার অধিকারকে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের ওপরে স্থান দেয়। এসব জলপথে যাদের মৃতু্য হয়েছে তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ। অধিকাংশই এসেছেন আফ্রিকার মূল ভূখন্ড থেকে। এর পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ ও পাকিস্তান থেকে আসা মানুষও রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ১৫৪ জন নারী ও ৫০ জন শিশু রয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, আটলান্টিক মহাসাগরের রুটটি সবচেয়ে বিপজ্জনক কারণ মহাসাগরের বৈরী আবহাওয়া বেশির ভাগ অভিবাসীদের ব্যবহৃত জলযানগুলোকে সহজেই ডুবিয়ে দিতে পারে। এ সময় বিপজ্জনক জলপথ অতিক্রম করতে গিয়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। চলতি বছর এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর।
এমন মৃতু্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ থেকেও ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা অন্তত ১৮টি রুট ব্যবহার করে। সেখানে দালাল চক্রের আরেক গ্রম্নপ তাদের দু-তিন দিন দুবাইয়ে রাখে। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সুবিধামতো সময়ে দালালরা নৌকা বা ট্রলারে করে তাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে দুই-একজন ইতালিতে যেতে পারলেও বেশির ভাগই সাগরে নিখোঁজ হন বা মারা যান।
আমরা মনে করি, বিভিন্ন দেশের অভিবাসন প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব মহলের সহযোগিতা ও সঠিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।