পবিত্র হজ

ক্ষমা, করুণা ও নৈকট্য লাভ হোক

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পবিত্র হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। আর্থিকভাবে সমর্থ ও শারীরিকভাবে সক্ষম পুরুষ ও নারীর জন্য হজ ফরজ। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতই তো হজ। যে ব্যক্তি মুজদালিফায় যাপন করা রাতের ফজরের নামাজের আগে এখানে এসে পৌঁছবে, তার হজ পূর্ণ হয়ে গেল। আরাফাত ময়দানে জাবালে রহমত অবস্থিত। এই পর্বতের ওপরে দাঁড়িয়ে মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। পবিত্র হজে, লাব্বাইক আলস্নাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাকা'-এই ধ্বনিতে মুখর হয় আরাফাতের ময়দান। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান আরাফাতের ময়দানে থাকেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করেন। প্রসঙ্গত, হজ পালনের জন্য সারা বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সৌদি আরবের মিনায় পৌঁছেন এবং মিনায় অবস্থান করাও পবিত্র হজের অংশ। এবারে সৌদি আরবে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শুক্রবার। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৭ জিলহজ রাত থেকেই মক্কা থেকে হজযাত্রীরা তাঁবুর শহর মিনার উদ্দেশে রওনা হন। এশার নামাজের পর মক্কার নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরামের কাপড় পরে মিনার উদ্দেশে রওনা হন হাজিরা। জানা গেছে, এবার বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশের প্রায় ২০ লাখ মুসলিস্ন হজ পালন করবেন। উলেস্নখ্য, করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর ২০২০ ও ২০২১ সালে হজ হয়েছিল সীমিত পরিসরে; অন্য কোনো দেশ থেকে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ২০২২ সালে বিদেশিদের জন্য হজের দ্বার সৌদি সরকার খুললেও ১০ লাখের বেশি মুসলমানকে অনুমতি দেয়নি। ২০২৩ সাল থেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক সময়ের মতো হজ হচ্ছে। আরবি 'হজ' শব্দের অর্থ ও মর্ম খুবই ব্যাপক এবং বিস্তৃত। শব্দার্থের দিক দিয়ে হজ হলো, কোনো কাজের ইচ্ছা করা বা দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। বৈয়াকরণ খলিলের ভাষায়, হজ অর্থ কোনো মহৎ ও বিরাট কাজের জন্য বারবার ইচ্ছা ও সংকল্প করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ হলো, আলস্নাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কতকগুলো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে আলস্নাহর ঘরের জিয়ারতের সংকল্প করা। হজ সম্পাদনে হাজিদের সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত কিছু কাজ করতে হয়। এগুলো হলো খানায়ে কাবা তাওয়াফ করা, মাকামে ইব্রাহিমের পশ্চাতে নামাজ পড়া, সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করা, মিনায় গমন করা, মুজদালিফায় অবস্থান করা, শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা, কোরবানি আদায় করে মাথার চুল ছেঁটে ন্যাড়া হওয়া, তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা এবং মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করা ইত্যাদি। এসব কর্মের মাধ্যমে হজের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না, সে আমার প্রতি জুলুম করল। তিনি আরও বলেছেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত হয়ে গেল। হজের এসব ইবাদতের মূল্য কত অপরিসীম, সহজেই তা বোঝা যায়। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে, আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না, তার পূর্ববর্তী গোনাগুলো মাফ করে দেওয়া হয়। উলেস্নখ্য, হজের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক দিক ছাড়াও আরও নানা দিক রয়েছে। মুসলমানরা একই পোশাক পরে, লাব্বাইক ধ্বনি উচ্চারণ করে, একই স্থানে অবস্থান করে মহান আলস্নাহর রেজামন্দি লাভের জন্য কাতরভাবে প্রার্থনা জানায়। তাদের দেহ-মনে থাকে ক্ষমা ও মুক্তি লাভের বাসনা। হজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নানা বর্ণ, গোত্র, ভাষার মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি ও সংহত করে। পবিত্র হজ পালনের মধ্য দিয়ে আলস্নাহ পাকের ক্ষমা, করুণা ও নৈকট্য লাভ হোক আমরা একান্তভাবে সেই কামনা করি।