বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আট মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। মহিববুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। বাংলাদেশে যে কোনো সময় ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা যদি নিরাপদ বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই, তাহলে সমস্ত জাতিকে দুর্যোগের বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। বিশেষ করে আমাদের ভয়ের কারণ ভূমিকম্প। বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। যে কোনো সময় বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আট মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ২০ শতাংশ বিল্ডিং কোলাপস হয়ে যেতে পারে। ঢাকা শহরে লাখ লাখ লোক আটকা পড়তে পারে। অনেক লোকের মৃতু্যর সম্ভাবনাও রয়েছে।
এটা সত্য, বাংলাদেশ মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এই ধরনের ভূমিকম্পে সুনামির কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। বঙ্গোপসাগরে ভূমিকম্পের চারটি সক্রিয় উৎস সমুদ্র এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি কম্পন সৃষ্টি করতে পারে- যা দেশকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচটি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইন দেশের মধ্যে রয়েছে- যা একটি বড় ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। অনেক ভবনের ত্রম্নটিপূর্ণ কাঠামো এবং যথাযথ সচেতনতার অভাবে এ দেশে ৭ বা তার বেশি মাত্রার বড় ভূমিকম্প হলে তা দেশকে বড় মানবিক ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে যাবে।
দেশের ভূপ্রকৃতির যে গঠন তা হচ্ছে কয়েকটি পেস্নটের সমন্বয়। যেমন ইন্ডিয়ান পেস্নট, ইউরেশিয়ান পেস্নট এবং পূর্বের দিকে আরেকটি। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে আমাদের ভূপ্রকৃতির গঠন অর্থাৎ এলিমেন্টারি অতটা শক্ত নয়। যার ফলে, আমাদের দেশে ভূমিকম্প হলে সেটি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে কিছুটা সময় লাগবে। এইটা হচ্ছে, আমাদের জন্য একটা ভালো দিক। তবে উন্নত বিশ্বের যেমন যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি থাকে তেমনি আমাদেরও এরকম দুর্যোগে পড়ার আগেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। প্রস্তুতির বিকল্প কিছুই নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অভ্যন্তর এবং প্রধান শহরগুলোর আশপাশে ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো নির্দেশ করে যে সাধারণভাবে দেশের জন্য এবং বিশেষ করে শহরগুলোর জন্য ভূমিকম্পের বিশেষ ঝুঁকি বিদ্যমান। কাঠামোগত নকশা, শহর পরিকল্পনা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকম্প শক্তির বিবেচনা তাই ভবিষ্যতের দুর্যোগ প্রশমনের জন্য একটি পূর্বশর্ত। রাজধানী শহর ঢাকা ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূণ। কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য দায়ী।
ভূমিকম্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, কোথায় সাহায্যের জন্য ফোন করতে হবে ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, টকশোতে প্রতিদিন প্রচার করা উচিত।
সর্বোপরি জাতীয় বিল্ডিং কোড মানতে হবে এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির যথাযথ প্রয়োগ বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।