বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, দেশের জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। ফলে, যে কোনো ধরনের রোগবালাই বৃদ্ধি পেলে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীতে তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হওয়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। আর এ সময়ে নিম্ন আয়ের তরুণ ও বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। যদিও শিশুরা তুলনামূলক কম আক্রান্ত হয়েছে।
আমরা মনে করি, ডায়রিয়া বাড়ছে- এই বিষয়টিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। তথ্য মতে, হাসপাতালে রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবনের বাইরে তাঁবু টাঙিয়ে রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন এবং অস্থায়ী ক্যাম্প প্রস্তুত করে রেখেছে রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)। অন্যদিকে, এটা জানা যাচ্ছে যে, আইসিডিডিআর,বিতে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ভর্তি হচ্ছে ৩৯ জন রোগী। ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত মোট ১২ দিনে এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৮ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন মোট রোগী ভর্তি হয়েছে ৯৪৬ জন। আমরা মনে করি, এটা আমলে নেওয়া দরকার যে, আইসিডিডিআর,বির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে প্রতি বছর দুইবার ডায়রিয়ার রোগী বাড়ে। শীতকালে রোগী বাড়লে শীতকালীন আউট ব্যাক ও গ্রীষ্মকালে রোগী বাড়লে গ্রীষ্মকালীন আউট ব্যাক বলা হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, এ বছর মার্চের ১৩ থেকে ১৬ তারিখ সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়ে ছিল। ১৬ মার্চ ৭৮৮ জন রোগী ভর্তি হয়। এরপর থেকে রোগী কমতে থাকে। সেটা শীতকালীন আউট ব্যাক ছিল। আর গ্রীষ্মকালীন আউট ব্যাক শুরু হয়েছে ২৯ মে'র পর থেকে। সেটা এখনও চলমান রয়েছে।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে এটাকে সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এই আশঙ্কাও উঠে এসেছে যে, রোগী আরও বাড়তে পারে। চিকিৎসকরা বলেছেন, গত ১২ দিনের রোগী বাড়ছে। এটা ঈদের আগে কিছুটা কমে যাবে। কিন্তু ঈদের পরে তা বাড়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। কেননা, কোরবানির বর্জ্য খাল-বিল হয়ে পানিতে মিশে যাবে। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণ বাড়বে। এতে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে, করণীয় সম্পর্কে জানা যাচ্ছে, গরুর হাট শেষ হলে সেটাও ভালো করে পরিষ্কার করে মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। এছাড়া হেলথ হাইজিনিং মেইনটেইন করে চলতে হবে। লক্ষণীয় যে, এবার যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ রোগী তীব্র পানি শূন্যতায় ভুগছিলেন। ৫০ শতাংশ রোগী মাঝারি ও মৃদু পানি শূন্যতায় ছিলেন। এছাড়া বাকি ২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন। ফলে ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে সঠিক সময়ে কেউ যদি হাসপাতালে এসে পৌঁছাতে পারে এবং সঠিক চিকিৎসা পায় তা হলে মৃতু্যও কম হবে এটা সামনে এসেছে। ফলে, জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে। পাশাপাশি বৃষ্টি হলে ডায়রিয়ার জন্য দায়ী জীবাণুগুলো শক্তিশালী হয়ে থাকে। এমনকি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পানি ও ঠান্ডা-বাসি খাবারে মাধ্যমে এ জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তাই এ সময়ে রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ধরনের শরবত, খাবার, চা স্টলের চা ও বেলপুরি, ফুসকা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। যা মেনে চলা জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিশুদ্ধ পানি পানসহ সামগ্রিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অসচেতনতার কারণে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে এটা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না। এছাড়া অনিরাপদ পানি, ভেজাল-পচা ও বাসি খাবারসহ অন্যান্য কারণেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গত কারণেই জনসাধারণকে স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য সরকারিভাবেও বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।