শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজেটে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন

মধ্যবিত্তের আশা, টিসিবির ট্রাকের পেছনে মুখ লুকিয়ে আর দাঁড়াতে হবে না। বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, সবার আশা কি পূরণ করতে পারবে এই বাজেট? টানা দুই বছর মানুষ কষ্ট করছে। তাই আশার আলোর সন্ধানে সবাই। কিন্তু টানেলের শেষে কি আশার আলো দেখা যাচ্ছে?
রেজাউল করিম খোকন
  ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০
মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজেটে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট একটি সংবেদনশীল পটভূমিতে এসেছে। দেশে ২০২২ সালে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জটি শুরু হয়। এর তৃতীয় বছরে এসেও অনেক জায়গায় সে সংকটের ব্যাপ্তি রয়েছে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে, ১৮-১৯ মাস ধরে আমদানিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। বর্তমানে প্রধান তিনটি সংকট হচ্ছে- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। বাজেট বড় হলে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে। তাতে মূল্যস্ফীতি ও চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। বাজেটের আকার কিছুটা ছোট হলে সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধি হয়তো কিছুটা কম হবে। তবে এ বছর প্রবৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এতটাই কঠিন যে, এগুলো আগে বাগে আনতে হবে। এতে সরকারি বিনিয়োগ ও ব্যয় যদি কমও হয়, তাতে লজ্জার বা ক্ষতির কিছু নেই। বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান- দুই জায়গাতেই নজর দিতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার তুলনায় বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম। আবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের হারও সুখকর নয়। এভাবে আমরা একধরনের বিনিয়োগ ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। এবার বাজেট ছোট হলেও কর্মসংস্থানকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়েছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতকে কীভাবে উৎসাহিত করতে পারি, বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে পারি, তা দেখতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ, অবকাঠামো বা অর্থায়নের অসুবিধা দূর করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। তবে গত এক-দেড় বছরে আমাদের ঋণ ব্যবস্থাপনা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সরকারের উন্নয়ন বাজেটের প্রায় পুরোটাই ঋণ করে চালাতে হচ্ছে। এতে দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সেটি আবার রিজার্ভে প্রভাব ফেলছে। সামনের দিনে মুদ্রার আরও অবনমন হলে ঋণ পরিশোধও ব্যয়বহুল হবে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় ঋণ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিতে হবে। সে আলোকে বাজেট ও খরচ সাজাতে হবে। সরকারি ব্যাংকে অব্যবস্থাপনার কারণে অর্থ লুণ্ঠিত হচ্ছে। এরপর বাজেটের মাধ্যমে সরকারি টাকাতেই ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানো হয়, যাতে তারা আরও ঋণ দিতে পারে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেরিতে হলেও সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এর কারণে ব্যবসার খরচ বাড়ছে- এটা দুঃখজনক। তবে ব্যবসাকে মসৃণ রাখতে বাজেটে সহায়ক কর ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। করহার ও কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। বাজেটে এ জায়গায় নজর দেওয়া দরকার। অর্থনীতির এক বিশেষ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য নতুন বাজেট দিতে হয়েছে। বর্তমানে অর্থনীতির সংকট আরও অনেক ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা তো এখনো ফেরেনি, উল্টো পরিস্থিতির উন্নতির বদলে আরও অবনতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ অর্থনীতির সূচকগুলো খুব একটা আশাব্যঞ্জক অবস্থায় নেই। তাই নতুন বাজেটে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার দিকনির্দেশনা বা কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরে যে বাজেট দিলেন তাতে অনেক আশার কথা শুনিয়েছেন। বলেছেন মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। যদিও স্বীকার করে নিয়েছেন, বিগত দু'টি বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও তা অনমনীয়ভাবে ৯ শতাংশের ওপর অবস্থান করছে। এ জন্য নতুন অর্থবছরে আগে নেওয়া দুই নীতিই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। যেমন- বাজেট-ঘাটতি কমানো এবং কৃচ্ছ্রসাধন। এই দুই পথে এবারও মূল্যস্ফীতি কমবে, এই ভরসা অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন। তবে তা কাজে দেবে, এটা বলা যাবে না। আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটে চারটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ইতিবাচক দিক। এ চারটি অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, স্বাস্থ্যখাতকে উন্নত করা, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের পরিবেশ উন্নত করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা বা জিরো টলারেন্সের ঘোষণা। এসব অগ্রাধিকারকে আমরা স্বাগত জানাই। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। আসবাব, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের কথা বলা হয়েছে। লজিস্টিক খাতকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়নি। এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিকে উৎসাহিত করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকা দরকার ছিল। মানুষের ওপর করের চাপ আরও বাড়বে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে কর-জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাত বাড়াতেই হবে। এ জন্য অর্থমন্ত্রী বাজেটে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগটি দুই হাত ভরে নিয়েছেন। তবে নতুন কোনো সংস্কার করে নয়, যারা কর ফাঁকি দেন, তাদের ওপর চাপ বাড়িয়ে নয়, বরং যারা নিয়মিত কর দেন, তাদের কাছ থেকেই বাড়তি কর আদায়ের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন বেশি। অর্থমন্ত্রী এবার কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি নিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করছেন। লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। যদিও অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, দীর্ঘ মেয়াদে এর ফলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে। এই বাজেটে অর্থনীতির অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের কথা বলা আছে। যেমন কঠোর মুদ্রা এবং ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে, যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। তবে বাজারে বিরাজমান উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগের গতি কমিয়ে জিডিপিতে প্রভাব ফেলতে পারে। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, উন্নত বিশ্বে বিদ্যমান উচ্চ সুদের হার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে এই উচ্চ সুদহার সামনেও অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো কঠিন হতে পারে। পরের চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে খেলাপি ঋণ এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু ব্যাংক একত্রীকরণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও এর সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। আইএমএফই বলে দিয়েছিল বাজেটের আকার খুব বেশি না বাড়াতে। অর্থমন্ত্রী কথা শুনেছেন। নতুন অর্থবছরের জন্য তিনি ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে আয়ের প্রাক্কলন হচ্ছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এতে সামগ্রিক ঘাটতি হবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় ঘাটতি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট-ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ পাবেন বলে আশা করছেন। বাকি ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির মতো ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে বাকি ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মূলত ব্যাংকব্যবস্থার ওপর ভর করেই বাজেট-ঘাটতি মেটাতে হবে। এই খাত থেকে সরকারই এ পরিমাণ অর্থ নিলে বেসরকারি খাতে ভাগ কমে যাবে। তাতে ব্যাহত হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্তটিও ইতিবাচক। করের সর্বোচ্চ হার ৩০% নির্ধারণ কিছুটা কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে। বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক হ্রাস। বাজারে যেন তার প্রভাব পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এডিপির শীর্ষ পাঁচটি খাতের মধ্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত ওঠে এসেছে। এই দুই খাতের বরাদ্দ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। করপোরেট কর কমানো, বাজেট-ঘাটতি কম রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্রিম করহার অর্ধেক করা বাজেটের ভালো দিক। ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে আবাসন খাত চাঙা হতে পারে। নির্মাণশিল্পের জন্য এটা ইতিবাচক। করপোরেট করহার কিছুটা কমানোয় স্বস্তি পাওয়া যাবে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাণিজ্য উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অন্যদিকে বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ আগের চেয়ে কমে যাওয়া শিল্পকারখানার জন্য উদ্বেগজনক। বাজেট-ঘাটতি পূরণে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীলতা নেতিবাচক। এবার ঘাটতি হবে জিডিপির ৪.৫ শতাংশ; এর মধ্যে ২.৫ শতাংশ আসবে ব্যাংকঋণ থেকে। এতে ব্যাংকের তারল্যে চাপ পড়বে। মধ্য মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকগুলো বাস্তবসম্মত নয়। ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধিতে কাঁচামাল আমদানিতে করভারও বাড়ছে। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে করহার কমানো হয়নি। শিল্পপণ্যে উৎসে কর ও স্ক্র্যাপের নির্ধারিত আমদানি শুল্ক কমানো হয়নি। শেয়ারবাজারের ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফায় করারোপ করা হয়েছে। ফার্নেস অয়েল ও লুব্রিকেটিং অয়েলের শুল্ক মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্পর্কে কোনো লক্ষ্যমাত্রা ও দিকনির্দেশনা না থাকাটা নেতিবাচক। মূল্যস্ফীতির এই সময়ে সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে কোনো উদ্যোগ নেই বাজেটে। উল্টো কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়বে। মেট্রোরেলে যাতায়াত করলে দিতে হবে বাড়তি অর্থ। সরকার এগুলো এড়াতে পারত। অপ্রদর্শিত ও কালোটাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ করা হয়েছে। এটা নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অন্যায়, এর মধ্য দিয়ে সৎ করদাতাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। এতে খুব বেশি করও আদায় হয় না। নতুন করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিনিয়োগের বিষয়ে কোনো লক্ষ্যমাত্রা ও দিকনির্দেশনা না থাকা। সরকারের পরিচালন ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি। ডলার-সংকট ও ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। বাজেটে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কোনো পদক্ষেপ নেই। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারের আবারও ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে বর্তমানে মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি যথোপযুক্ত হয়নি। সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তো বাড়েনি, বরং বিদ্যমান করদাতাদের উচ্চস্তরের করহার বাড়ানো হয়েছে। সেটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। করদাতার সংখ্যা না বাড়িয়ে বিদ্যমান করদাতার ওপর করের চাপ বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবভিত্তিক নয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের ওপর নূ্যনতম করের বিধানটি করনীতির পরিপন্থী। করযোগ্য আয়ের ওপর কর প্রযোজ্য হয়। অন্য কোনো তহবিলের ওপর তা প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। সাধারণ মানুষের ওপর থেকে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য বাজেটে আমরা আরও বেশি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আশা করেছিলাম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এসব উদ্যোগ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য বাজেটে আরও বেশি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাই বাজেট পাসের আগে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে আশা রাখছি। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, নতুন বাজেট অগ্নিমূল্যের বাজার থেকে স্বস্তি দেবে।

মধ্যবিত্তের আশা, টিসিবির ট্রাকের পেছনে মুখ লুকিয়ে আর দাঁড়াতে হবে না। বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, সবার আশা কি পূরণ করতে পারবে এই বাজেট? টানা দুই বছর মানুষ কষ্ট করছে। তাই আশার আলোর সন্ধানে সবাই। কিন্তু টানেলের শেষে কি আশার আলো দেখা যাচ্ছে?

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে