তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের অভিনন্দন

প্রকাশ | ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তথ্য মতে, রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে নয়াদিলিস্নতে রাষ্ট্রপতি ভবনের আঙিনায় এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নরেন্দ্র মোদিকে শপথ পড়ান ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের প্রায় আট হাজার বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার নয়াদিলিস্ন পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, দুই সরকারের পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের নেতা জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড স্পর্শ করলেন নরেন্দ্র মোদি। টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানাই আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। বলা দরকার, এমন বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে যে, নরেন্দ্র মোদি যেভাবে বিশ্বমঞ্চে ভারতকে তুলে ধরেছেন তা সবচেয়ে জনবহুল দেশটির সাম্প্রতিক আর কোনো নেতা করতে পারেননি। মোদি ভারতকে ও এর দ্রম্নত বর্ধনশীল অর্থনীতিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নের মতো বৈশ্বিক ইসু্যগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা একটি পক্ষ করে তুলেছেন। এবারের এই বিজয় মোদি ও তার হিন্দু-জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) আরও পাঁচ বছর বিশ্বে ভারতের মর্যাদা বাড়ানোর সুযোগ দেবে। তবে লক্ষণীয় যে, এক দশক ধরে মোদি যে প্রভাব নিয়ে ক্ষমতা উপভোগ করেছেন এবারের নির্বাচনের ফলাফল তাকে তা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন একটি অবস্থানে নিয়ে গেছে। কেননা বর্ণিল এই নেতা ও তার দল বিজেপি প্রত্যাশিত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জোটের অংশীদারদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই আলোচনাও উঠে এসেছে যে- বিশ্লেষকদের ধারণা, যখন নাগরিক স্বাধীনতা এবং তরুণদের বেকারত্ব বৃদ্ধির মতো সমস্যা সমাধান করার কথা তখন ভারতে ইসলামভীতি ও ধর্মীয় সহিংসতায় ইন্ধন জোগানোর ফলে নির্বাচনে বড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন মোদি। প্রসঙ্গত, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদী প্রবণতা দেশটির ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফলে দেশটির সংশ্লিষ্টদের সার্বিক পরিস্থিতি ভাবতে হবে, একইসঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে- ভারত তার মূলনীতি থেকে সরে আসবে না। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র আর প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। এ কথাও বলা দরকার, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নানা বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। ভারতে সাম্প্রদায়িকতাপ্রসূত কোনো অঘটন ঘটলে বাংলাদেশেও তার প্রতিক্রিয়া হয়। এছাড়া ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারতের অবস্থান হওয়ায় দেশটির সঙ্গে আমাদের রয়েছে বিশাল সীমান্ত এলাকা। বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে ভারতের অভিন্ন নদীব্যবস্থা, যা সরাসরি দুই দেশের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এর বাইরেও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে প্রভাবিত করে থাকে। সঙ্গত কারণে ভারতের নির্বাচনও বাংলাদেশের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বলতে চাই, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও উষ্ণ হয়েছে। প্রসার ঘটেছে বাণিজ্যসহ সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্র। নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। এমনকি মোদি সরকার বারবার প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা- যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এসব দিক বিবেচনায় আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, নরেন্দ্র মোদির এবারের শাসনামলে বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। ভারতে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় বাংলাদেশের মানুষ। আর অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধানের মাধ্যমেই তা সম্ভব হতে পারে। সর্বোপরি বলতে চাই, বিগত শাসনামলে বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিকতা লক্ষ করেছি। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলেও আমরা আশাবাদী। আমরা চাই, ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া তাদের প্রতিশ্রম্নতির বাস্তবায়ন ঘটাতে আরও আন্তরিক হবে। নরেন্দ্র মোদির নতুন মেয়াদে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুসুলভ সম্পর্ক আরও প্রসারিত হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।