শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

অবৈধ উপায়ে বিদেশগমন

রোধে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
  ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০
অবৈধ উপায়ে বিদেশগমন

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশগমনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ পথে বিদেশগমনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, আবার এর সঙ্গে মানব পাচারকারী চক্র জড়িত। সমুদ্রপথে অবৈধভাবে বিদেশগমনের বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। আর এতে যেমন প্রতারণা ও হয়রানির ঘটনা ঘটে, তেমনি অবৈধ পথে বিদেশযাত্রায় ঘটে মৃতু্যর ঘটনা। ফলে সামগ্রিকভাবে অবৈধ বিদেশ যাত্রার ভয়াবহতাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অবৈধ ৮৪ বাংলাদেশিকে আটকের ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, বিদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধের পর মালয়েশিয়ায় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে দেশটিতে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শত শত অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার জোহর রাজ্যে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ৮৪ বাংলাদেশিসহ তিন শতাধিক অভিবাসীকে আটক করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন। এক বিবৃতিতে ইমিগ্রেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জানিয়েছেন, 'ড্রোন নজরদারিসহ প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, সাড়ে ৮শ' থেকে এক হাজার অভিবাসীকে ১৩০ কনটেইনারে রাখা হয়েছিল। এনফোর্সমেন্ট অফিসার, সিভিল ডিফেন্স ফোর্স, ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট, পিপলস ভলান্টিয়ার কর্পস (রেলা) এবং ন্যাশনাল অ্যান্টি-ড্রাগস এজেন্সিসহ ১৩০ জনের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকারী দলের আসার গাড়ির শব্দ শুনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অভিবাসীদের মধ্যে। দলটি যখন নির্মাণস্থলে অভিযান চালায় তখন মোট ২৫২ জন অভিবাসীকে স্ক্রিন করা হয়।'

আমরা বলতে চাই, অবৈধভাবে বিদেশগমনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ফলে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে যেমন পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমনি শ্রম বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে দক্ষ কর্মীর বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। একইসঙ্গে অবৈধভাবে বিদেশযাত্রায় নিরুৎসাহিত করতে হবে। দালালদের অপতৎপরতা রুখতে হবে। অবৈধভাবে বিদেশগমনের ভয়াবহতা কিরূপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে এমন তথ্যও সামনে এসেছে যে, ১০ বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১০ বছরে ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। এছাড়া এটাও বলা দরকার, ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথটি হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই পথে ঘটেছে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিদেশ গমনেচ্ছুদের দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনাও অহরহ ঘটে যা স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠাজনক।

আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। অন্যদিকে এটাও মনে রাখা জরুরি, প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ফলে বিদেশে সুনাম অক্ষুণ্ন্ন রাখতে হবে। দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে। কিন্তু অবৈধভাবে কেউ যেন বিদেশে যেতে উৎসাহী না হয় সেই লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। অবৈধভাবে, ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রা রোধে ও দালাল-প্রতারকদের দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখারও বিকল্প নেই। স্মর্তব্য যে, অনেকেই মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে পাসপোর্ট, টাকা-পয়সা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। শিকার হচ্ছেন অমানুষিক নির্যাতনের। অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা রোধ ও বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বৈধ পথে কম খরচে প্রবাসে কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগে গতি আনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করা জরুরি। আর এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার ভয়াবহতা আমলে নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। দালালদের খপ্পরে যেন সাধারণ মানুষ না পড়ে, সেটা যেমন বিবেচনায় নেওয়া অপরিহার্য, তেমনি এবারে অভিযান চালিয়ে ৮৪ বাংলাদেশি আটকের ঘটনাও এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে এবং অবৈধপথে বিদেশগমনের ভয়াবহতা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে- এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে