শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

সুষম খাদ্যের সংকট

শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
  ০৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
সুষম খাদ্যের সংকট

আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সঙ্গত কারণেই শিশুর সার্বিক সুরক্ষা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে দুজন 'সুষম খাদ্যের সংকটে' রয়েছে। আর এই তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ। এছাড়া এ বয়সি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন সুষম খাদ্যের 'তীব্র সংকটের' মধ্যে আছে, যারা দিনে মাত্র এক বা দুই ধরনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে বলেও জানা যাচ্ছে। উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার 'শৈশবকালীন খাদ্য সংকট : প্রারম্ভিক শৈশবে পুষ্টি বঞ্চনা' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। সেখানেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।

আমরা বলতে চাই, যদি বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে দুজন 'সুষম খাদ্যের সংকটে' রয়েছে- এমন পরিস্থিতি হয়, তবে তার ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যদিকে এ বয়সি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন সুষম খাদ্যের 'তীব্র সংকটের' মধ্যে আছে, এটাও এড়ানো যাবে না। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য নূ্যনতম যে পাঁচ ধরনের খাদ্য গ্রহণের সুপারিশ ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) করে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শিশু তা থেকে বঞ্চিত। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে যে তথ্যগুলো উঠে আসছে তা আমলে নেওয়া এবং বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এ সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা।

লক্ষণীয়, ইউনিসেফ বলছে, শৈশবকালীন পর্যাপ্ত সুষম খাবারের ঘাটতি শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর বিশেষ প্রভাব দেখা যায় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে। আর এর পরিণাম সারাজীবনের জন্য স্থায়ী হতে পারে- যা কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। অন্যদিকে শৈশবে ভালো পুষ্টি থেকে বঞ্চিত শিশুরা সাধারণত স্কুলে কম ভালো করে, কর্মজীবনে কম উপার্জন করে এবং দারিদ্র্য ও বঞ্চনার চক্রে আটকে থাকে। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য। জানা যায়, যেসব শিশু নিয়মিত ওই পাঁচ ধরনের খাবার খেতে পারে না, তাদের অপুষ্টির একটি মারাত্মক ধরন- উচ্চতার তুলনায় ওজন কম হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেশি থাকে। এছাড়া এটাও লক্ষ্য করা দরকার যে, বিশ্বব্যাপী সুষম খাদ্য সংকটের শিকার শিশুদের মোট সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের (৬৫ শতাংশ) বাস যে ২০টি দেশে, বাংলাদেশ তার একটি। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিলে যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেছেন, ভালো পুষ্টি শিশুদের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি ও বিকাশের ভিত্তি। শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তাদের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। আর এ বিষয়ে পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যার আওতায় পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান সেবাগুলোকে আরও উন্নত ও সহজলভ্য করতে হবে; সঙ্গে আরও প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে দুজন 'সুষম খাদ্যের সংকটে' রয়েছে, এটা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশে শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকট বাড়ার পেছনে- পুষ্টিকর খাদ্য কেনায় পরিবারের অক্ষমতা, শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্পর্কে বাবা-মায়ের সচেতনতার অভাবসহ নানা কারণ জানা যাচ্ছে। যা আমলে নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে শিশুদের সুষম খাদ্যের সংকট সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে