রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সঠিক উদ্যোগ নিন

  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সঠিক উদ্যোগ নিন

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। ১ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ছিল ৭৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত এক বছরে ৪২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৫ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকগুলোয় সুশাসনের অভাবকেই তুলে ধরছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত বছরের মার্চ শেষে এই খেলাপির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ছিল ৭৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। এটি এমন সময় বেড়েছে যখন সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির নির্দেশনা অনুসারে, ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ শতাংশ। ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কথা বলে ঋণগ্রহীতাদের অনেকে ঋণ পরিশোধ করছেন না। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বেশিরভাগই অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই ঋণ আদায় করা কঠিন হয়ে উঠছে। ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি খেলাপি জনতা ব্যাংকের। এর পরিমাণ ৩০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা ঋণের ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা ঋণের ২৮ শতাংশ। শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই নয়, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত বছর পুরো ব্যাংকিং খাতে ঝামেলাপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আছে খেলাপি, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ, রাইট-অফ ঋণ ও আদালতের নির্দেশে নিয়মিত করা ঋণ। ঋণসংক্রান্ত যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা উদ্বেগজনক। এমনকি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে।

যে তথ্য উঠে আসছে তা কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অর্থনীতিবিদের ভাষ্য, মানুষের ঋণগ্রস্ততা নিয়ে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা চরম উদ্বেগের।

আমরা বলতে চাই, রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চিত্র খুবই বিপজ্জনক। এভাবে যদি খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় তা হলে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ভীতিকর বার্তা। পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে