রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

প্রস্তাবিত বাজেট যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
প্রস্তাবিত বাজেট যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে মূল্যস্ফীতির বড় চাপের মধ্যে অর্থমন্ত্রী এই বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। জানা যায়, এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম করা হয়েছে 'সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার'। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে চার দশমিক ছয় শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। আমরা বলতে চাই, এবার যখন বাজেট প্রস্তাব করা হলো তখনও নানামুখী সংকট সারা বিশ্বে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামেনি। মূল্যস্ফীতি, পণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান দেশ জুুড়ে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাজেট বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

উলেস্নখ্য, বর্তমানে যেখানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ, সেই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৬ শতাংশ ছিল। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমিয়ে বড় প্রবৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন সেখানে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬শ' কোটি টাকা। এছাড়া ৪ হাজার ৪শ' কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২শ' কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।

সাধারণত অর্থমন্ত্রী যেসব পণ্যের শুল্ক ও কর কমানো বা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন সেসব পণ্যের দাম কমে। আর বিপরীতে যেসব পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপ বা আগের চেয়ে বাড়ানো হয় সেগুলোর দাম বাড়ে। এবারে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে জানা যাচ্ছে তা হলো- বিড়ি-সিগারেট-জর্দা, মোবাইল সিম ও কলরেট, কাজু বাদাম, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, ফ্রিজ-এসি, এলআরপিসি তার, গাড়ি কনভার্সনে, জেনারেটর, ম্যাকরেল মাছ, পর্যটন, নির্মাণ খরচ। অন্যদিকে যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে তা হলো বিদেশি গুঁড়োদুধ, চকলেট, কার্পেট, ল্যাপটপ, দেশে তৈরি মোটর সাইকেল, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, মিথানল, পলিপ্রোপাইলিন, ইয়ার্ন, ম্যাংগানিজ, ডেঙ্গুর চিকিৎসাসামগ্রী, আমদানিকৃত কিডনি ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও সার্কিট ক্যানসার চিকিৎসা সরঞ্জাম, লোহা জাতীয় পণ্য, বৈদু্যতিক সরঞ্জাম।

আমরা বলতে চাই, বাজেট বাস্তবায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয় সামনে আসছে সেগুলো আমলে নিয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এবারের বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে এটাও খবরে ওঠে এসেছে যে, এই বাজেট কঠিন সময়ে চ্যালেঞ্জের বাজেট। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ডক্টর আতিউর রহমান বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটটি প্রাথমিকভাবে দেখে একে বাস্তবতার প্রতি অনেকটাই সংবেদনশীলই মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে এই বাজেটটিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু কল্যাণমুখী হওয়ার সুযোগ যে ছিল, সেটিও মানতে হবে বলে জানান। অন্যদিকে মোট রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটিকে সময়োচিত মনে করলেও এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন এই প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে বাজেট সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে তা আমলে নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বজায় রাখতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। এছাড়া নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যাক এবং সংকট নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে