রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা চালাতে হবে

  ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা চালাতে হবে

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার বিকল্প নেই। ফলে শ্রমবাজার সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের নেতিবাচক বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে তা উদ্বেগের। প্রসঙ্গত বলা দরকার, মালয়েশিয়া যেতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী ৩১ মে'র মধ্যে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। এসব কর্মীকে প্রবেশের সুযোগ দিতে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে মালয়েশিয়া সরকার এই সময় আর বাড়াবে না বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বৈদেশিক কর্মসংস্থানে দেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধের বিষয়টি জানা যায়। আর এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই হতাশাজনক চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে, বিশেষ করে যারা মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী। আর এখন যখন জানা গেল, মালয়েশিয়া যেতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী ৩১ মে'র মধ্যে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি তখন বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তৎপরতা বজায় রাখতে হবে। একইসঙ্গে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এর আগেই জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশসহ যে ১৫টি দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে মালয়েশিয়া সেসব দেশ থেকে কর্মী নেওয়া হবে না। আর এটাও আলোচনায় এসেছিল যে, অবৈধ বিদেশিকর্মী নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং মালয়েশিয়া কেন বিদেশিকর্মী নিয়োগ বন্ধ করল, তার যথাযথ কারণ খতিয়ে দেখা জরুরি। একইসঙ্গে যেন আবারও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয় সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে এটাও আলোচনায় এসেছিল, সিন্ডিকেট থাকতে পারে, যা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এছাড়া সিন্ডিকেটের কারণে অতীতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানা যায়। রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। অন্যদিকে লক্ষণীয় এমন অভিযোগ আছে যে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ সংক্রান্ত সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এসব সিন্ডিকেটের কারণে দেশের সব এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায় না, সুযোগ পায় কিছুসংখ্যক এজেন্সি। যারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আর এদের কারণে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে জনপ্রতি ব্যয় হয় সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে অনেকগুণ বেশি- এমন আলোচনাও ওঠে এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না।

আমরা বলতে চাই, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। গত দেড় বছর সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে মালয়েশিয়ায়। ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে, যা সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, বিদেশি শ্রমবাজার আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তা কতটা সেটি ডলার সংকটের সময় আরও বেশি অনুধাবন করা গেছে। ফলে শ্রমবাজার যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হতে হবে। বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার পাশাপাশি চলমান শ্রমবাজারগুলোয় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে হবে। একদিকে যেমন বিদেশ গমনে আগ্রহীদের মনে ক্ষোভ ও হতাশা দানা বাঁধছে, অন্যদিকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ থেকে- এটি উদ্বেগের। এছাড়া বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার পথ অনেক ক্ষেত্রে রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই নানা মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলেও জানা যায়, যা শঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।

সর্বোপরি বলতে চাই, মালয়েশিয়া যেতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী ৩১ মে'র মধ্যে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি- এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। দক্ষ জনবল যেমন গড়ে তুলতে হবে, তেমনি সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যেন দ্রম্নত পুনরুদ্ধার হয়, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে