রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
পাঠক মত

শিশুর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতে আপনার করণীয়

অনামিকা দেব তৃষা শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
শিশুর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতে আপনার করণীয়

আমাদের দেশে প্রাথমিক স্কুলগুলোতেই দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও, বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিরা কিংবা প্রাইভেট উদ্যোগে ৩-৫ বছর বয়সি শিশুদের জন্য বহুল জনপ্রিয় পেস্ন গ্রম্নপ, নার্সারি গ্রম্নপ এবং কিন্ডারগার্টেন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়। এসব স্কুলে শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের কথা মাথায় রেখে তাদের শিক্ষার মৌলিক দক্ষতাগুলো যেমন পড়তে পারা, লিখতে পারা, কিছু গণিত করতে পারা ইত্যাদির সুযোগ প্রদান করা হয়। আপনার শিশুর জ্ঞানের বিকাশের এই মোক্ষম সময় তাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দরুন জ্ঞানের পাশাপাশি ইতিবাচক আচরণ শিক্ষাও নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকে এ ক্ষেত্রে। আবার, শিশুরা এই বয়স থেকেই সমবয়সিদের সঙ্গে সামাজিকীকরণের সুযোগ পায় এবং তাদের অনুভূতিসমূহের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ এবং বোধশক্তির উদয়ন ঘটায়। তবে, শিশুকে প্রিস্কুলে দেওয়ার পর তার সার্বিক বিকাশে প্রিস্কুলের কার্যক্রমের পাশাপাশি শিশুর পিতামাতারও কতগুলো ভূমিকা পালন করা অবশ্যই কর্তব্য। শিশু যাতে শৈশব থেকেই সব ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সে জন্য পিতামাতা হিসেবে আপনার অবশ্যই যা মেনে চলতে হবে, তা হলো : আপনার শিশুর শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। শিশু শ্রেণিকক্ষে কেমন আচরণ করে, শ্রেণিকার্যক্রমে তার আগ্রহ কেমন কিংবা তার কর্মদক্ষতার পরিধি- এসব কিছুই শিক্ষকরা নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন বিধায় শিশুর সবল ও দুর্বল দিকগুলোর রেকর্ড তাদের কাছে থাকে। এই সবল এবং দুর্বল দিকগুলোর রেকর্ড আপনাকে আপনার শিশুর ভবিষ্যৎ দক্ষতা উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সেগুলোর অগ্রাধিকার ক্রম বুঝতে সাহায্য করবে। শিশুকে বানান, সংখ্যা ইত্যাদি শেখানোর ক্ষেত্রে অভিনব পন্থা অনুসরণ করুন। বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে শেখালে এ ধরনের শিখন স্থায়ী হয় বেশি। বস্তুর নাম শেখানোর সময় ওই বস্তুর বাস্তব উপস্থিতি কিংবা ছবি ইত্যাদি থাকলে শেখানোর কাজটি সহজ হবে। শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকের লেখা মুখস্ত না করিয়ে বাড়িতে থাকা বিভিন্ন বস্তুর মাধ্যমে খেলার আয়োজন করা যেতে পারে। আজকাল প্রিস্কুলে শিশুদের ছোট ছোট প্রোজেক্ট করতে দেওয়া হয়। এসব প্রোজেক্টে আপনার শিশুকে সাহায্য করলে তার শিখনের গতি বাড়বে। তবে, লক্ষ্য রাখবেন, এসব কাজের সম্পূর্ণটুকু কখনোই আপনি করবেন না। এতে, ছোট ছোট কাজের জন্য শিশুর নির্ভরশীলতা বাড়বে এবং পরে নিজে কাজ করতে চাইবে না। শিশুর শোনার দক্ষতা এবং শুদ্ধ উচ্চারণের অভ্যাস করার জন্য পাঠ্যপুস্তকের কবিতা, গল্প ছাড়াও শিশুদের জন্য লেখা অন্যান্য কবিতা ও গল্প তাদের পড়ে শোনাবেন। শিশুদের মনে অনেক সময় অনেক ধরনের প্রশ্ন আসে এবং তার সেসব প্রশ্নের সম্মুখীন প্রথমেই তার বাবামাই হন। শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশের নিমিত্তে আপনি যাতে তার জ্ঞান আহরণের একজন প্রাথমিক উৎস হয়ে উঠতে পারেন, এর জন্য শিশুকে নির্ভীকভাবে প্রশ্ন করতে উৎসাহ প্রদান করবেন। শিশুর যেকোনো প্রশ্নতেই কখনো বিরক্ত হবেন না; বরং সেগুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করবেন। শিশুর ছোট বড় যেকোনো অর্জনেই তাকে উৎসাহ দিন। শিশু কোনো ভুল করলে তার ওপর চিৎকার করে বা বকা না দিয়ে তাকে স্নেহের সঙ্গে ভুল শোধরানোর সুযোগ দিন। শিশু যাতে স্কুলে শিক্ষক এবং তার সহপাঠীদের সঙ্গে সফল ও ইতিবাচকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে, সে জন্য বাড়িতে তাকে যোগাযোগ দক্ষতা অনুশীলন করাতে পারেন। শিশুকে বিভিন্ন কোকারিকুলার কার্যক্রম যেমন : গান করা, ছবি আঁকা, নাচ কিংবা কবিতা, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠ ইত্যাদি কাজে উৎসাহ দিন এবং সম্ভব হলে স্কুলে তার সঙ্গে সেগুলোতে অংশগ্রহণ করারও চেষ্টা করুন।

অনামিকা দেব তৃষা

শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে