রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই ও ই-সিগারেটকে না বলি।

ই-সিগারেট :মাদকে আধুনিকতার ছোঁয়া

তপন কুমার ঘোষ
  ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
ই-সিগারেট :মাদকে আধুনিকতার ছোঁয়া

ই-সিগারেট! বর্তমানে দেশীয় বাজারে যার চাহিদা বেড়েই চলছে। সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু ই-সিগারেট ব্যবহারের ফলে নিজের অজান্তেই ই-সিগারেট সেবনকারী ব্যক্তিরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশে ই-সিগারেট ব্যবহার, বিক্রি ও বিপণন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট আইন না থাকায়, তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটের প্রসার ও বাজারজাতকরণের অনুমোদনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার সীমিতসংখ্যক মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করে। তাই চাইলে খুব সহজেই এর ব্যবহার রোধ করা সম্ভব। প্রথম পর্যায়ে এটাকে রোধ করা না গেলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে।

যেহেতু গ্রামগঞ্জে ই-সিগারেটের প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না, তাই অনেকের কাছেই প্রশ্ন থাকতে পারে, ই-সিগারেট কী? ই-সিগারেট হচ্ছে একটা ডিভাইস। যার মধ্যে আছে অ্যাটোমাইজার, একটি ব্যাটারি এবং একটি কার্টিজ। কার্টিজে থাকে ই-জুস। অ্যাটোমাইজার ব্যাটারি থেকে উৎপন্ন শক্তি দিয়ে ই-জুস নামক তরল পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করে। ই-সিগারেট ব্যবহারকারী সেই বাষ্প মুখের সাহায্যে টেনে নেন ফুসফুসে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ভেপিং।

আমাদের দেশে সাধারণত সব সিগারেট প্রায় এক মাপের হলেও ই-সিগারেটের আকার ও ডিজাইন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে ই-সিগারেটে ব্যবহৃত ই-জুসে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ফলের ফ্লেভার। যার ফলে, ই-সিগারেট সেবনকারীর মুখ থেকে তামাকের গন্ধের পরিবর্তে বের হয় ফলের ঘ্রাণ। এতে করে ই-সিগারেট সেবনকারীকে হঠাৎ করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। তাই ই-সিগারেট সেবনকারীদের কাছে এটি সহজেই জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

কিন্তু ই-জুসে থাকা নিকোটিন ও কিছু রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহের জন্য ধূমপানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকর। ই-জুসে থাকা নিকোটিন শ্বাসকষ্ট ও ক্যানসারের কারণ। তাছাড়া এতে রয়েছে কার্সিনোজেন, অ্যাক্রোলিন, ডায়াসিটাইল, ডাইথিলিন গস্নাইকোল, ক্যাডমিয়াম ও বেনজিনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ- যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য ও সংস্থার চালানো জরিপে যেটা স্পষ্ট।

১২ জুলাই, ২০২৩ তারিখে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ই-সিগারেট : আদি ধূমপানে আধুনিকতার মোড়ক নিবন্ধে উলেস্নখ করেছেন, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন কর্তৃক চার শতাধিক গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ই-সিগারেট সেবনে তরুণরা কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানি বৃদ্ধির মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। একই বছর অল্পবয়সিদের মধ্যে ভেপিংজনিত অসুস্থতা ও প্রাণহানি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় টঝ ঋড়ড়ফ ধহফ উৎঁম অফসরহরংঃৎধঃরড়হ (ঋউঅ) ভেপিংকে মহামারির পর্যায় বলে ঘোষণা করে।

তবে আমাদের দেশে আশার আলো দেখাচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা। এ বিষয়ে ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, ০১ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে বলেছেন, 'দানবীয় হওয়ার আগেই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করুন।' সবাই যখন এক হয়ে সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন, তখনই ই-সিগারেটের মতো পণ্যের বাজারজাত খুবই হতাশাজনক। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ৪ জুলাই ২০২৩তারিখে প্রকাশিত 'তরুণ সমাজের জন্য নতুন হুমকি ই-সিগারেট' নামক প্রতিবেদনে দেখা যায়, টিসিআরসির সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি উলেস্নখ করেছেন, ১৫৩ জন এমপি ই-সিগারেট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন।

অতএব, এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, আমরা বলতেই পারি আমাদের দেশে ই-সিগারেট আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার বন্ধ এখন সময়ের দাবি। তবে আমার মনে হয়, ই-সিগারেট বন্ধে শুধু সরকারি আইন যথেষ্ট নয়। সরকারি আইনের পাশাপাশি আমাদের ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই ও ই-সিগারেটকে না বলি।

সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্স্নেস্নাগান তুলি 'ধূমপান মুক্ত করব দেশ, গড়ব সোনার বাংলাদেশ।'

তপন কুমার ঘোষ : নবীন লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে