টিসিবির ট্রাকের এই দীর্ঘলাইনই বলে দেয় যে, আজ স্বল্প আয়ের মানুষ ভালো নেই।

নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন জ্বলছে

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

মাইনুল ইসলাম অমি
বর্তমান সময়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজার। বাজার হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখানে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের মানুষের আনাগোনা হয়ে থাকে। কিন্তু এর সিংহভাগ অংশই স্বস্তিসহকারে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হন না। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ যে ভয়ানক অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করে গেছে তা থেকে আজও বিশ্ববাসী মুক্ত হতে পারেনি। করোনাভাইরাসের অভিশাপ কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে। এ সংকট আরও দিগুণ আকারে বাড়িয়ে দিয়েছে গাজায় ইসরাইলি হামলা। এ সব সংকটের ফলে দেশের সাধারণ জনগণ আজ অসহায়। একটি অর্থনৈতিক সূচকে ওঠে এসেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য গ্রামীণ এবং শহুরে পরিবারগুলোর জন্য ছিল একটি প্রধান ধাক্কা। মূল্যস্ফীতির চাপ ছাড়াও এ সময়ে কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য, ফসল, গবাদি পশুর রোগ, পরিবারের সদস্যদের উপার্জন হ্রাস, বন্যা, ফসলের কম দাম ইত্যাদির প্রভাব ছিল। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা তাদের খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এনেছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ৭০ শতাংশ পরিবার তাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনেছে। ৩৫ শতাংশ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় হ্রাস করেছে। ২৮ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করেছে এবং ১৭ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় হ্রাস করেছে। এই সমীকরণের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে সারাবিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে এর একটি বড় প্রভাব বাংলাদেশও পড়েছে। এই প্রভাবের ফলে ভালো নেই দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, 'মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত ১১টি নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন সেবার মূল্য এক বছরের ব্যবধানে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য ওঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, ডিম, মাংস, সবজি ইত্যাদি। এছাড়া কাপড়, গৃহসামগ্রী, গণপরিবহণের ভাড়া, বিনোদন ইত্যাদি রয়েছে এ তালিকায়। এ সব সমীকরণ দেখলেই স্পষ্ট হয়, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে সাধারণ মানুষ কতটা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মানুষের ব্যয় উলেস্নখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও বাস্তবতা হচ্ছে এই ব্যয় সামাল দেওয়ার মতো আয় করতে পারছেন না দেশের সিংহভাগ মানুষ। এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারের সঙ্গে তাল মিলাতে না পারায় এক নিশ্চুপ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে দেশের সাধারণ আয়ের মানুষ। বর্তমান সময়ে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের এক উলেস্নখযোগ্য কারণ হচ্ছে মজুতকারীদের কারসাজি। দেশের নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের এক উলেস্নখযোগ্য কারণ এটি। মজুতকারীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার মাধ্যমে অধিক মুনাফা লাভ করে থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। কোনো নিত্যপণ্যের দাম একবার বৃদ্ধি পেলে যেন কিছুতেই তা হ্রাস হয় না। হ্রাস পেলে তা ক্রয় সীমানার মধ্যে আসে না। টিসিবি ট্রাকের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ মানুষ কম মূল্যে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে পারে। কিন্তু তা কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। ফলে টিসিবি ট্রাক থেকে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে আসা একটি স্বল্প আয়ের মানুষের অংশকে খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়। টিসিবির ট্রাকের এই দীর্ঘলাইনই বলে দেয় যে, আজ স্বল্প আয়ের মানুষ ভালো নেই। মাইনুল ইসলাম অমি :নবীন লেখক