আবার বেড়েছে প্রবাসী আয়। প্রবাসী আয়ের ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। এক মাসেই ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে- যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬ হাজার ৩৭০ কোটি ৪০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ধরে)। একক মাস হিসাবে গত ৪৬ মাসের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশে ডলারের দামে অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়নে চাপ এবং সর্বোপরি প্রবাসী আয়ে হুন্ডির থাবার কারণে কমতে থাকে প্রবাসী আয়। গত কয়েক বছর ধরে কর্মসংস্থানের জন্য যে হারে মানুষ বিদেশে গেছে, সে হারে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পায়নি। এসব কারণে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয় সরকার। বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে প্রবাসী আয়ের ডলারের দাম বাড়ায়, যাতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডি-হাওলার দ্বারস্থ না হয়। মে মাসের শুরুতে একসঙ্গে ৭ টাকা বাড়িয়ে প্রবাসী আয়ের ডলারের দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর থেকে বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়া শুরু হয়।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে মে মাসে এসেছে ২৭ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৯৫ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭৩ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ ৬২ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। একক মাস হিসাবে এরপর আর এত বেশি প্রবাসী আয় আসেনি। এরপর বিদায়ী মে মাসে এলো ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ১১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ১৩৭ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়।
তবে এখনো হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছে প্রবাসীরা। আর এই সুযোগ নিচ্ছে দেশি-বিদেশি অর্থ পাচারকারী একটি চক্র। যে কারণে ২০২৩ সালে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেও প্রবাসী আয় তেমন বাড়েনি।
এটা সত্য, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স নিয়ে দেশে-বিদেশে একটি চক্র অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে খোলাবাজারের ডলার বেশি দর নিচ্ছে। অন্যদিকে, যখন হুন্ডির এই চক্রটি এতই সংঘবদ্ধ তাদের শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈধ পথে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যেন পাঠায় সেটিকে সামনে রেখেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।