বনায়নে পিছিয়ে বাংলাদেশ পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বনায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পিছিয়ে আছে- এই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয়, কিন্তু সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। ফলে, এই ঘাটতি পূরণ করা কতটা জরুরি তা সংশ্লিষ্টদের অনুধাবন করতে হবে। বনায়নে পিছিয়ে থাকার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, শিল্পকারখানা, পর্যটন, বনভূমি দখল ও প্রকাশ্যে পুড়িয়ে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে বনভূমি। এ যেন দেখার কেউ নেই! আর এমন পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক হতে পারে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। এটা আলোচনায় এসেছে যে, গাজীপুরের শালবন ৮০টির বেশি বৃহৎ শিল্পকারখানার দখল-দূষণে ধ্বংস হচ্ছে। বনায়নে দিনের পর দিন পিছিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট ভূখন্ডের ১৭ শতাংশকে রক্ষিত বনাঞ্চল করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে বিশ্বের প্রায় সব দেশ জাতিসংঘের একটি সনদে স্বাক্ষর করে ওই ঘোষণা দেয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। 'দক্ষিণ এশিয়ার রক্ষিত বনের অবস্থা ও ভবিষ্যৎ' শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে এ চিত্র। আর এমন অবস্থায় বুধবার পালিত হলো বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, 'করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা'।
আমরা বলতে চাই, ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট ভূখন্ডের ১৭ শতাংশকে রক্ষিত বনাঞ্চল করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু কেন সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেশ পিছিয়ে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। একইসঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টের গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১১ সালে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সনদ (সিবিডি) অনুযায়ী ওই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। এসব দেশের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপে রক্ষিত বনের পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশ ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের মাত্র ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত বন করতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভুটান, দেশটির রক্ষিত বন ৪৯ শতাংশ ৬৭ শতাংশ। ভারতে রক্ষিত বন ৭ শতাংশ ৫২, শ্রীলংকায় ২৯ শতাংশ ৮৯, পাকিস্তানে ১২ শতাংশ ৩১, নেপালে ২৩ শতাংশ ৬৩, মালদ্বীপে ২ শতাংশ ৩ ও আফগানিস্তানে ৩ শতাংশ ৬৪ শতাংশ।
এছাড়া এটাও আমলে নেওয়া জরুরি যে, প্রকৃতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এলাকা রক্ষিত বনভূমি। আর জলভাগের ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ এলাকা রক্ষিত অবস্থায় আছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ রক্ষিত বনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সবচেয়ে পিছিয়ে আছে এশিয়ার দেশগুলো। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রক্ষিত এলাকার ১ শতাংশের কম জায়গা কার্যকর ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে। বাকি এলাকায় বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার, বৃক্ষ ধ্বংস করাসহ মোট ১৪ ধরনের সমস্যা রয়েছে। আমরা বলতে চাই, বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে, সমস্যা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অন্যদিকে, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে বিদ্যমান বাস্তব অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে, এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি প্রত্যাশিত।