পাঠক মত
বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সরকার সত্যিই প্রশংসনীয় ও উন্নয়নমুখী সরকার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের ছোট-বড় অনেক উন্নয়ন করেছে বর্তমান সরকার। আরও অনেক উন্নয়ন করবে- এমন বিশ্বাস আমাদের। উন্নয়ন করতে হবে, তবে ঢালাওভাবে শুধু করলেই মানুষের হৃদয়গ্রাহী হবে না। কোনো বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিচার-বিবেচনা করেই উন্নয়ন করতে হবে। যাতে দেশবাসী বেশি উপকৃত হতে পারে।
উন্নয়ন মূলত দুই ধরনের বলা যায়- মৌলিক উন্নয়ন ও সার্বিক বা মেগা উন্নয়ন। মৌলিক উন্নয়নটা হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বিষয় দ্রম্নত সম্পন্ন করা। তারপর বড় বড় উন্নয়ন বা মেগা উন্নয়ন। ফলে গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ধারাবাহিক পর্যায়ে বা পদ্ধতিতে উন্নয়ন করলে মানুষ সেটা ভালোভাবে অনুভব করতে পারবে।
মৌলিক উন্নয়ন : আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে সহজ-সরল মানুষের সংখ্যাই অধিক। তাই, আমাদের দেশের গণমানুষের দৃষ্টিতে মৌলিক (মূল) বা আসল উন্নয়ন বলতে বোঝায় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে যদি পর্যায়ক্রমে সমাধান করা যায়, তবেই আমাদের দেশের জনগণ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। অন্যথায় যতই মেগা উন্নয়ন করা হোক না কেন তা দেশের জনগণের আবেগ-আপস্নুত খুশি মন পাওয়া কিছুতেই সম্ভব হবে না। তাই তো ১৫ বছর যাবৎ বহু মেগা উন্নয়ন করা সত্ত্বেও হাসি-খুশি পরিবেশ নিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভিড় জমায় না দেশের মানুষ। মৌলিক উন্নয়নকেই আমাদের দেশে প্রধান উন্নয়ন বলে গণ্য করা হয়। তাই আমাদের দেশের সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রত্যাশা করছি মৌলিক উন্নয়নগুলোর দিকে অধিক মনোযোগ দেওয়া। মৌলিক উন্নয়নের পূর্ণ বাস্তবায়নটা যদি করে ফেলা যায়, তবে দেখা যাবে মেগা উন্নয়নের প্রতি জনগণের আবেগ-আকর্ষণ অনেক বেড়ে যাবে। দুই ভাগ করে করার কথা বলছি এ কারণে যে, মৌলিক উন্নয়ন ও মেগা উন্নয়ন দুটিই বৃহৎ আকারের। কোনোটিই ছোট নয়। একসঙ্গে করতে হলে বহু অর্থের প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে অসৎ মানুষের সংখ্যা অতিরিক্ত। তারা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে টাকা-পয়সা-সম্পদ আত্মসাতের মহড়া দেয়। এটা সামাল দিতেও সরকারের সমস্যা হয়। হয়ে যায় ৩টি সমস্যা ক্ষেত্র। অর্থাৎ একের জায়গায় ৩ দিকে ব্যবস্থাপনা করতে গেলে যে কোনো সরকারকেই হিমশিম খেতে হয়। আমাদের দেশে এমন একটা জনশ্লোক আছে, তিন এ গোলমাল চার এ হাট। তাই এ বিষয়ে সূচিন্তিতভাবে ১টি করে ধাপে ধাপে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করলে সরকার সাশ্রয়ী ও সহজভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়নে সক্ষম হবেন আশা করা যায়।
আমাদের দেশে ভোটের দিনের অবস্থান নিয়ে অনেক চিন্তাবিদ ও বক্তারা অনেক কথা বলেন, মন্তব্য করেন। সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা তুলে ধরে বিভিন্ন সমালোচনাও করেন। বিরোধী পক্ষের বক্তা-কর্মীরাও জনগণ তথা ভোটারদের মৌলিক উন্নয়ন বিষয়ক সরকারের ব্যর্থতা বুঝিয়ে-সুজিয়ে নেতিবাচক ও ভোটবিমুখ করার সুযোগ পান। যার ফলে ভোটের দিন আমাদের দেশে ভোট কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা হ্রাস পেয়ে যায়। তবে, যদি আগামী নির্বাচনের পূর্বে মৌলিক উন্নয়নগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তবে এ অবস্থার পরিবর্তন আশা করা যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন দেশের মানুষ খুশি-আনন্দ সহকারে ভোট দিতে যাবে। ডাকাডাকির ও ভোট চাওয়ার প্রয়োজন হবে না। ভোটাররা খুশি মনে আনন্দের সঙ্গে ভোট দিয়ে যাবে। তবে মৌলিক উন্নয়নগুলো পূর্ণ বাস্তবায়ন হওয়ার পরই সেটা সম্ভব হতে পারে।
এ বিষয়ে আমার একটি ছোট্ট ধারণা হলো, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই সাধারণ মানুষ। মেগা উন্নয়নের গুরুত্ব অনুধাবন করা লোকের সংখ্যা খুবই কম। তারা উন্নয়ন বলতে মৌলিক উন্নয়নের বিষয়গুলোই ভালো বোঝেন। তাদের যদি বলা হয় পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল দেখেছ? যাও দেখে এসো। তারা অনেকেই বিরক্তির সঙ্গে বলে ওঠেন, ওসব দিয়ে কী করব? ওসব আমাদের জন্য নয়, বড় লোকদের জন্য। তারাই দেখুক। ভোটের পর আমাদের কেউ খোঁজ-খবরও নেয় না। আমাদের পেটে ভাত নেই, থাকার জায়গা নেই, কাজকর্ম নেই। বাজার করতে গেলে অর্ধেকও কিনতে পারি না। ইত্যাদি নানা ধরনের কথা, মন্তব্য শোনা যায়। তারপরও আছে সরকারবিরোধী মানুষজনের কুমন্তব্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য, যা জনগণকে সরকারের প্রতি বিরূপ করে তোলা।
তাই, একটু গভীরে তলিয়ে দেখে মৌলিক উন্নয়নগুলো সম্পন্ন করতে পারলে আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুর '৭০ সালের নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে মতো তার সুযোগ্যকন্যার আমলেও ভোট কেন্দ্রে অগণিত ভোটারের জোয়ারে ভাসবে। আবারও ভোট কেন্দ্রে ভোটারের লম্বা লাইন দেখা যেতে পারে।
মোলস্না সিদ্দিকুর রহমান
মিরপুর, ঢাকা