বেড়েছে অবক্ষয় ও সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করেছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে, বন্ধু বন্ধুকে অবলীলায় হত্যা করছে। স্ত্রী স্বামীর লাশ টুকরা টুকরা করে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। স্বামী ঠুনকো কারণে স্ত্রীকে সন্তানসহ হত্যা করছে। এমন কি প্রেমের কারণে অর্থ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে, হতাশা নিঃসঙ্গতা বঞ্চনা অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পর্যন্ত করছে। পারিবারিক বন্ধন স্নেহ, ভালোবাসা মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। এর পাশাপাশি সমাজে ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও নারী নির্যাতন অবমাননা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যা সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নজির। অন্যদিকে, দেশে পারিবারিক সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। পারিবারিক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। সহিংসতার বলি হচ্ছে অবোধ শিশুরাও। প্রায় প্রতিদিনই একাধিক পারিবারিক সহিংসতায় স্বজনের হাতে ঝরছে স্বজনের প্রাণ। প্রতিটি মানুষের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত গৃহকোণটিও যেন পরিণত হচ্ছে অনিরাপদ স্থানে। অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা এ জন্য অন্যান্য আর্থসামাজিক ও মনোগত বিষয়ের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ও নৈতিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন। শুধু পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে পৃথক কোনো জরিপ না থাকলেও পুলিশ সূত্র ও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে পারিবারিক সমস্যার জেরে অন্তত ২০০টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। বেসরকারি গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতার কারণে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ১৫৪ জন নারী ও শিশুর মৃতু্য হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতায় বেশি প্রাণ ঝরছে নারীদের। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে সম্পত্তিজনিত বিরোধ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, যৌতুক দাবি, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আয়-ব্যয়ের ফারাক, মাদকদ্রব্যের প্রভাব ও আধিপত্যের লড়াইয়ের জেরে। অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়া এবং ভোগবাদী ও আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা বেড়ে যাওয়ায় স্বার্থের জন্য ঘনিষ্ঠতম স্বজনদেরও হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করছে না কেউ কেউ। অর্থনৈতিক চাপ ও অনিশ্চয়তাকেও সহিংসতা বৃদ্ধির বড় কারণ মনে করেন অনেকে। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কতর্ব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়। যা বর্তমান সমাজে প্রকট। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি- যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এসব রোধ করতে না পারলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে; অন্যদিকে, পরিবারের সদস্যরাও থাকবে নিরাপত্তাহীন। সামাজিক অবক্ষয় ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।