শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে

  ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে

দেশে মূল্যস্ফীতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, গত এক মাসের ব্যবধানে শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে, মে মাসে শহর ও গ্রামে সমানতালে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এতে ভোক্তার আয়ের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতির পেটে। যেখানে ভোক্তার প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে যখন এটা সামনে আসছে যে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে অসহায় হয়ে পড়ছে মানুষ- তখন পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, তা মোকাবিলায় উদ্যোগী হওয়া।

আমরা মনে করি, এটা আশঙ্কার বিষয় যে, মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষের। এছাড়া, এটাও এড়ানো যাবে না, জানা যাচ্ছে- মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশার কথা শোনানো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমছে না। আমলে নেওয়া সমীচীন, দেশে বিগত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। গত সোমবার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ- যা এপ্রিলে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের মে মাসে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় হয়েছে, এ বছর মে মাসে একই পণ্য কিনতে ১০৯ টাকা ৮৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষর দিশেহারা হয়ে পড়ে। নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি না থাকলে তা অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর; ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্তরা সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন। গত দুই বছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিতজীবনে। এটাও আলোচনায় আসছে যে, মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও লাভ হয়নি, বরং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখা দিয়েছে।

বলা দরকার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কথা অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা কয়েক বছর ধরে বলে আসছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আমলে নেয়নি। তবে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার কিছুটা বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলেই জানা যাচ্ছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, শুধু মুদ্রানীতি দিয়েই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে না। দরকার রাজস্ব নীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সমন্বিত উদ্যোগ। তা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

সর্বোপরি বলতে চাই, প্রায় দুই বছর ধরে সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এর প্রভাব পড়ছে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। এটাও আলোচনায় এসেছে যে, বিগত কয়েক মাস ধরে বিশেষ করে মে মাসে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে পণ্যমূল্য। মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে হতাশা ও অসন্তোষ। এ পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা, যেটি আমলে নিতে হবে। যদি নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এমনটি স্বাভাবিক। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে