জাতীয় চা দিবস সম্ভাবনাময় চা শিল্প

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

মো. ইকবাল চৌধুরী
৪ জুন, ২০২৪ জাতীয় চা দিবস, এ বছর এই দিবসটির প্রতিপাদ্য 'স্মার্ট বাংলাদেশের সংকল্প রপ্তানিমুখী চা শিল্প'। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্পের মধ্যে চা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, বহু বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে চা শিল্প জড়িয়ে আছে। ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয় ১৮০০ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এবং তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৪০ সালে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল- তবে ১৮৪৭ সালে সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট রোডের কাছে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মালনীছড়াই বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান। এক সময় চা ছিল আমাদের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির ফলে চা রপ্তানি অনেকাংশে কমে যায়। পরবর্তী সময়ে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ ও উত্তরবঙ্গে চা শিল্পের প্রসারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০২৩ সালে দেশের ১৬৮টি চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন বাগান থেকে ১০২.৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে- যা বাংলাদেশের চা উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৪ জুন, ১৯৫৭ সাল থেকে ১৩ অক্টোবর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রথম বাঙালি হিসেবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থেকে বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চা বাগানগুলো প্রায় বিধ্বস্ত হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এই শিল্পকে টেকসই করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যুদ্ধে বিধ্বস্ত পরিত্যক্ত বাগানগুলো ১৯৭৫ সালের মধ্যে বাগান মালিকদের কাছে হস্তান্তর করেন। চা শিল্পে জাতির পিতার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০২১ সাল থেকে, ৪ জুন জাতীয় চা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চা শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতীয় চা পুরস্কার নীতিমালার অধীনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় যা চা শিল্পের অগ্রযাত্রাকে অনুপ্রাণিত করছে। এক সময় চা ছিল আমাদের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। ২০০১ সালে ৫৩.১৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয় এবং রপ্তানি হয় ১২.৯২ মিলিয়ন কেজি- ক্রমান্বয়ে এই রপ্তানি কমে ২০১৫ সালে ০.৫৪ মিলিয়ন কেজিতে চলে আসে। ২০২৩ সালে উৎপাদন ছিল ১০২.৯২ মিলিয়ন কেজি এবং রপ্তানি ছিল ১ মিলিয়ন কেজি। বাংলাদেশের চা শিল্পের একটি বড় চ্যালেঞ্জ রপ্তানিমুখী করা। চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণও উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ৫% হারে ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি চায়ের কাপে চুমুক পড়ে। প্রতিটি পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে পণ্যের মূল্য, চা যেহেতু নিলাম ব্যবস্থার মাধ্যমে বিক্রি হয়, নিলামে চায়ের সঠিক মূল্য পেতে চায়ের অভ্যন্তরীণ বাজারের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের রপ্তানিবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। উলেস্নখ্য যে, বৈশ্বিক চাহিদার কথা বিবেচনা করে দেশে গুণগতমানের বস্ন্যাক টি, গ্রীণ টি উৎপাদিত হচ্ছে। ইউরোপের বাজারে চা রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধির জন্য ২০২২ সালে ইউকে পার্লামেন্টের হাউস অব লডসে জবারারহম ইধহমষধফবংয টক :বধ :ৎধফব শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়- যা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের চা রপ্তানি এবং দেশের চা খাতে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদী। চা শিল্পের জন্য প্রয়োজন রপ্তানি বাজার পুনরুদ্ধার ও নতুন আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টির জন্য চা রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানি ইনসেনটিভ বাড়াতে হবে, চা শিল্পের অংশীজনদের নিয়ে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য মেলা ও টি এক্সপোতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আমি দীর্ঘ ২৭ বৎসর চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত, চা শিল্পকে রপ্তানিমুখী করা ছাড়া বিকল্প নেই অন্যথায় আমাদের চা বাগানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চায়ের রপ্তানিবাজার পুনরুদ্ধার ও নতুন নতুন বৈশ্বিক বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে ২০২৪ সালের চা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় 'স্মার্ট বাংলাদেশের সংকল্প রপ্তানিমুখী চা শিল্প' বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক। মো. ইকবাল চৌধুরী :মহাব্যবস্থাপক। বিক্রয় ও বিপণন (চা), সিটি গ্রম্নপ। কার্যনির্বাহী সদস্য, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ