শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

সিলেটে আকস্মিক বন্যা

কার্যকর উদ্যোগ নিন
  ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০
সিলেটে আকস্মিক বন্যা

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, জেলার নদনদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। একইসঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। এসব এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সড়ক ডুবে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জে ৫০টি গ্রামসহ শত শত গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। তথ্য মতে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাসিন্দারা এখানে উঠতে শুরু করেছেন। লক্ষণীয়, সিলেটে গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর সঙ্গে মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, নন্তাপুর ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা। ভেসে গেছে গবাদি পশু, পুকুর ও খামারের মাছ। এ অবস্থায় দিশেহারা ও আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই যে, পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রাম পস্নাবিত হওয়া, গবাদি পশু, পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে যাওয়া যাওয়াসহ রাস্তাঘাটও ডুবে গেছে। এছাড়া পানিবন্দি অবস্থার কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।

উলেস্নখ্য, সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত জেলায় ৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর মে মাসের ২৯ দিনে সিলেটে ৭০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে ৩৩০ দশমিক ০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এছাড়া পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, নদনদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। জেলার অন্তত তিনটি পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও কিছু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নেও কাজ করতে হবে।

আমরা বলতে চাই, এটা মনে রাখা জরুরি- পানিবন্দি দশা কিংবা বন্যার মতো পরিস্থিতিতে, পানিবাহিত রোগবালাই এবং বিশুদ্ধ পানি সংকট তৈরি হয়- যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কতটা চরমে ওঠে। দেশের বিভিন্ন সময়ের বন্যা পরিস্থিতি কিংবা পান্দিবন্দি দশায় মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে সেটি নানা সময়েই জানা গেছে। পানিবন্দি মানুষ কেউ পাশের নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, কেউ আবার রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। কেউ ঘরে খাট চৌকি দিয়ে মাচাং বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। এছাড়া নানা ধরনের ফসল ডুবে যায়। শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকটও তৈরি হয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা জারি রাখা অপরিহার্য।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। ফলে, মনে রাখা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। যখন নদনদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। একইসঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে