জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

সাকিবুল হাছান
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বর্ষা মৌসুম এলেই নগরবাসীকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। শহরের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্যতম বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তা-ঘাটসহ অনেক এলাকা। তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ার পর চট্টগ্রামবাসী যেখানে স্বস্তি পাওয়ার কথা, সেখানে ৬ মের এক ঘণ্টার বৃষ্টির পানিতে থইথই করে শহরের বেশকিছু এলাকা যা তাদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। এলাকাগুলোতে দুই-তিন ফুট পর্যন্ত পানি ওঠে। কিন্তু এই পানি নেমে যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিনও লেগে যায়। যার ফলে রাস্তাঘাটে মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত বছর বৃষ্টিতে ১৩ বার চট্টগ্রাম নগরী ডুবেছে। এবার বৃষ্টির মৌসুম শুরু না হতেই নগরবাসী উদ্বিগ্ন। তাদের প্রশ্ন, মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়ার পরও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। গত ২২ মে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চট্টগ্রাম শহরের ভারী বৃষ্টিপাত হয় ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায় ফলে দেখা তীব্র জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, সিটি করপোরেশন একটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। প্রকল্পগুলোর কাজে সমন্বয় আনতে ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে প্রতিবছর সমন্বয় ও পর্যালোচনা সভা করা হলেও এবার সে রকম কিছু হয়নি। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন সংস্থা চারটি প্রকল্প নিলেও কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। চার প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। ৭ থেকে ১০ বছর আগে নেওয়া প্রকল্পগুলো তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দফায় দফায় বরাদ্দ ও সময় বাড়ানো হচ্ছে। ১০ বছর আগে কোনো প্রকল্প নেওয়া হলে সেই সময়ের বাস্তবতা ও এখনকার বাস্তবতা এক নয়। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ঠিকভাবে না করে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কোন খাতে কত ব্যয় হবে, তারও সঠিক পরিকল্পনা ছিল না। নকশায় ছিল নানা ত্রম্নটি। এমনকি রেগুলেটরের অবকাঠামো হলেও পাম্প মেশিন বসানো হয়নি। সে ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা গতবারের চেয়ে বাড়ার আশঙ্কা আছে। শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খালগুলো অবৈধ দখল ও কঠিন বর্জ্যে ভরাট হয়ে আছে। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক সুয়ারেজ লাইন দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারছে না। ড্রেনেজ সিস্টেমেও সমস্যা রয়েছে। যেখানে সহজেই পানির সঙ্গে বিভিন্ন বর্জ্য যেমন- পলিথিন এবং অন্য অপচনশীল পদার্থ ভেসে গিয়ে নালার মধ্যে আটকে যায়, ফলে পানি সহজে নিষ্কাশন হতে পারে না, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরে অনেক ছিন্নমস্তক মানুষ থাকে যাদের নিজস্ব বাড়িঘর নেই। রাত হলে তারা আশ্রয় নেয় শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তারা সেই আশ্রয়টুকুও হারান। আবার পথচারী থেকে শুরু করে ছোট আকারের যানবাহন প্রায়ই গর্তে পড়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্মক আহত হতে হয়। তাই চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে। শহরে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ নির্মাণ করতে হবে। যাতে করে বৃষ্টির পানি সহজেই নদীতে চলে যেতে পারে সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক সুয়ারেজ লাইনগুলোকে পরিষ্কার এবং পানি চলাচলের উপযুক্ত রাখতে হবে। শহরের আশপাশের সব নালা-খাল, নদীগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এটি ভেবে বসে থাকলে এর ফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ আমরা অনেকেই বর্জ্য ড্রেনে ফেলে দিই ফলে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। তাই সরকারের পাশাপাশি নিজে সতর্ক হতে হবে এবং অন্যকেও এ বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। তাহলে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে। সাকিবুল হাছান ঢাকা কলেজ, ঢাকা