প্রতারক ব্যবসায়ীদের লাগাম টানতে হবে

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

ইসরাত জাহান
শিক্ষা একটা জাতির মেরুদন্ড। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার বিকাশে শিক্ষাপদ্ধতি ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দরিদ্রতা। অনেক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার ব্যয় বহন করতে না পেরে কিংবা পারিবারিক আর্থিক দৈন্যদশায় ঝরে পড়ে জ্ঞানার্জন থেকে। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর নিজেদের খরচ নিজেরা বহন করার রীতি প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে তার প্রকাশ খুবই কম। এ দেশে খন্ডকালীন চাকরিকে ছোট মনে করা হয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, শিক্ষাজীবনে অর্থ উপার্জনের অন্যতম সম্মানযোগ্য, উপযোগী মাধ্যম হচ্ছে টিউশন। এতে যেমন জ্ঞানার্জনের সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় ঠিক তেমনি অর্থ উপার্জনও হয়। শিক্ষাজীবনে টিউশন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ টিউশনের ওপর নির্ভর করে অনেক শিক্ষার্থী নিজের ব্যয়ভার এবং লেখাপড়ার খরচ বহন করে আবার অনেকে পরিবারের ভরণপোষণ চালায়। ছাত্রজীবনে টিউশন করিয়ে অর্থ আয়ের কারণও যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়। যেমন কেউ জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে, কেউ নিজের চলার খরচ জোগাতে বাধ্য হয় টিউশন করতে, কেউবা শখ পূরণের প্রত্যাশায় আবার কেউ কেউ তো এ দিয়ে পরিবারের হাল ধরে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসে। তাদের পড়াশোনার ব্যয় নিজেদের বহন করা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। দেশের শহরে টিউশন খুঁজে পাওয়া যে বড়ই দুষ্কর। একটা টিউশন খুঁজতে গিয়ে কত বেগ পোহাতে হয় তা ভুক্তভোগীই অনুভব করতে পারেন। শতচেষ্টার পরও টিউশন পাওয়া পাচ্ছে না। শহরের সব টিউশন এখন টিউশন মিডিয়ার কবজায়। শহরের অলিগলিতে, নামে-বেনামে শত শত টিউশন মিডিয়া গড়ে উঠেছে। আবার অনেক মিডিয়া তো সরাসরি প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে। গ্রাম থেকে শহরে আসা শিক্ষার্থীরা নিজের খরচ জোগাতে হন্যে হয়ে যখন টিউশন খুঁজে, তখন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে টিউশন মিডিয়াগুলো প্রতারণা করছে। দেখা যায়, মিডিয়াগুলো টিউশনের প্রচারে লিফলেট, পোস্টার এবং সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে ফাঁদ হিসেবে। টিউশন দেওয়ার আগেই অগ্রিম টিউশনের প্রথম মাসের ৫০-৭০ শতাংশ টাকা দিতে হয় মিডিয়াকে। আবার অভিনব কৌশল অনুসরণেও পিছিয়ে নেই সেই কথিত মিডিয়া দালালরা। যেমন গৃহশিক্ষক দেওয়ার এক-দুই মাস পর অভিভাবকদের বলা হয় 'আমাদের কাছে আরও অভিজ্ঞ শিক্ষক আছেন, তার চেয়ে ভালো পড়াবেন আশা করি'। এমন নানা কথাবার্তা বলে অভিভাবকদের মনে দক্ষ শিক্ষকের লোভ জাগিয়ে তোলেন। আবার উভয় পক্ষ থেকে টাকা নেওয়া হয়। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই শিক্ষার্থী যে টিউশনকে আঁকড়ে ধরে পুরো মাস অতিবাহিত করে, বেঁচে থাকার সরঞ্জাম সাজায়। প্রশ্ন হতে পারে, যাদের টিউশন প্রয়োজন তারা পোস্টার, লিফলেট দিয়ে প্রচারণা করলেই তো পারে। অনেকেই সেভাবে টিউশন পেয়েছে, পাচ্ছে। কিন্তু তা নেহাতই কম। কেননা এখানেও রয়েছে মিডিয়া চক্রের কারসাজি; যা ভেস্তে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রচারণা। বর্তমানে টিউশন অনেকটা দুষ্টচক্রের আবর্তনে। সাম্প্রতিক কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা মেরে খেয়েছে 'কুমিলস্না আরবান টিউশন মিডিয়া' নামক ফেইক মিডিয়া। এ ছাড়া আরও অনেক মিডিয়া রয়েছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের টিউশনি দেওয়ার আশা দিয়ে টাকা খাচ্ছে। প্রায়ই দেখা যায়, টিউশন মিডিয়ার প্রতারণায় অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত। টিউশন মিডিয়া সেবার নামে বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। অনেক টিউশন খুঁজতে থাকা শিক্ষার্থীরা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন অনুরূপভাবে অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণার খবর বেড়েই চলেছে। টিউশন মিডিয়াগুলোর জন্য শিক্ষার্থীদের সম্মান এবং শিক্ষার মূল্যায়নও কমে যাচ্ছে দিনদিন। একটা নার্সারির বাচ্চার জন্য শর্ত হিসেবে নির্ধারণ করে দেয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী প্রয়োজন অথচ একটা নার্সারির বাচ্চাকে পড়ানোর জন্য অভিজ্ঞতা এবং বিজ্ঞান বিভাগের হওয়া জরুরি ছিল না, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষার্থীই পড়াতে পারত এই বাচ্চাকে। এভাবে টিউশন মিডিয়াগুলো শিক্ষার্থীদের ছোট করে, শিক্ষার মান কমিয়ে ফেলছে। ভালো শিক্ষকের সন্ধান দেবে বলে অভিভাবকদেরও নিজেদের অভিরুচি অনুযায়ী সাজিয়ে ফেলে, ধোঁকা দিয়ে টাকা মেরে পকেট গরম করে। এখন সময় এসেছে পরিবর্তনের। নামে- বেনামে গড়ে ওঠা টিউশন মিডিয়ার বিরুদ্ধে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং টিউশনের মতো শিক্ষা সহযোগী অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা অতীব জরুরি তাই এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে প্রশাসনকে। প্রত্যাশা করছি আর কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক যাতে নতুন করে প্রতারণার শিকার না হতে হয় সেক্ষেত্রে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কাম্য। কথিত মিডিয়ার লাগাম টানতে প্রশাসনের সদিচ্ছা প্রয়োজন। ইসরাত জাহান লোকপ্রশাসন বিভাগ কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়