মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার বিকল্প নেই। ফলে এরই ধারাবাহিকতায় শ্রমবাজার সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের নেতিবাচক বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে তা উদ্বেগের। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বৈদেশিক কর্মসংস্থানে দেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধের বিষয়টি জানা যাচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে হতাশাজনক চিত্র পরিলক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে যারা মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী। তথ্য মতে, আজ থেকে বিদেশি কর্মীদের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। বৃহস্পতিবার সিএনএর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া হাতে অল্প সময় থাকায় জরুরিভিত্তিতে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে কর্মী পাঠানো হয়। এতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে চাপ পড়ার বিষয়টিও খবরে উঠে আসে। উলেস্নখ্য, ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম রোববার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশসহ যে ১৫টি দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে মালয়েশিয়া, ৩১ মে থেকে সেসব দেশ থেকে কর্মী নেওয়া হবে না। আর এটাও আলোচনায় এসেছে যে, অবৈধ বিদেশি কর্মী নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। মালয়েশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর ভবিষ্যতে চাহিদার ভিত্তিতে কর্মী নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য, দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলেছিল। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং মালয়েশিয়া কেন বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করল, তার যথাযথ কারণ খতিয়ে দেখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, দেশটির হাইকমিশনার বলেছেন, সিন্ডিকেট থাকতে পারে, যা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এছাড়া সিন্ডিকেটের কারণে অতীতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানা যায়। রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। অন্যদিকে লক্ষনীয় এমন অভিযোগ আছে যে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ সংক্রান্ত সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এসব সিন্ডিকেটের কারণে দেশের সব এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায় না; সুযোগ পায় কিছুসংখ্যক এজেন্সি। যারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আর এদের কারণে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে জনপ্রতি ব্যয় হয় সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে অনেকগুণ বেশি- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। অন্যদিকে এটাও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। গত দেড় বছর সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে মালয়েশিয়ায়। ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। যা সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, বিদেশি শ্রমবাজার আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তা কতটা সেটি ডলার সংকটের সময় আরও বেশি অনুধাবন করা গেছে। ফলে শ্রমবাজার যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগি হতে হবে। বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার পাশাপাশি চলমান শ্রমবাজারগুলোয় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে হবে। একদিকে যেমন বিদেশ গমনে আগ্রহীদের মনে ক্ষোভ, হতাশা দানা বাঁধছে, অন্যদিকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ থেকে- এটি উদ্বেগের। এছাড়া বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার পথ অনেক ক্ষেত্রে রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই নানা মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে যা শঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। কেননা প্রতারণা ও হয়রানির ঘটনা ঘটছে। এতে বিদেশ গমনেচ্ছুদের অনেকে সর্বস্বাস্ত হচ্ছে, যা আমলে নিতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে, অবৈধভাবে গমনের কারণে বহির্বিশ্বের সম্ভাবনাময় অনেক শ্রমবাজার এদেশীয় শ্রমিকদের জন্য নিষিদ্ধ জোনেও পরিণত হয়েছিল। ফলে দক্ষ জনবল যেমন গড়ে তুলতে হবে তেমনি সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে জনশক্তি রপ্তানি নিশ্চিত করতে হবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যেন দ্রম্নত পুনরুদ্ধার হয় সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।