শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

একজন সফল পিতার গল্প

ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন। ছাত্রজীবনের কথা স্মরণ করে তিনি জানান, স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্টে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। ওই এলাকাজুড়ে তখন এই আবদুর রহমানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
আমজাদ হোসেন
  ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০
একজন সফল পিতার গল্প

সন্তান নামক চারাগুলো যখন উচ্চশিক্ষা লাভ করে সম্মানজনক অবস্থানে অধিষ্ঠিত ঠিক ওই সময় বাবা নামক বৃক্ষটি কর্মজীবনের কর্মঘণ্টা শেষ করে অবসরে যাচ্ছেন। যে অবসর থেকে আর কর্মজীবনে ফেরা হচ্ছে না। ঘড়ির সময় দেখে অফিসে যাওয়ার তাড়না আর থাকছে না। আজ ৩০ মে বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস।

কর্মজীবনের খাতা থেকে বিদায় নেওয়া এই ব্যক্তিটির নাম মো. আবদুর রহমান। জন্মেছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি গ্রামে। বর্তমান নিবাস নরসিংদী শহরের টাওয়াদী মহলস্নায়। পেশায় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা। শেষ কর্মস্থল সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের নরসিংদী কোর্ট বিল্ডিং শাখায়।

কর্মস্থলে তিনি যথেষ্ট সততা এবং আদর্শ বজায় রেখে কাজ করেছেন। কর্মে ছিলেন একনিষ্ঠ কর্মী এবং গ্রাহকের সেবাদানে ছিলেন যথেষ্ট আন্তরিক।

আবদুর রহমান পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা হলেও চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। নিজ উপজেলার সাহেরচর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রথম চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন। সেখানে প্রায় ৭ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৯৩ সালে প্রবেশ করেন ব্যাংকে।

ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের ৩১ মে তার জন্ম। পিতামৃত আলী আকবর। শৈশবে পিতার সঙ্গে কৃষি কাজ এবং একইসঙ্গে পড়ালেখা চালিয়ে যেতেন। তিনি জন্মেছেন নরসিংদীর একেবারেই দুর্গম পলস্নী এলাকার চরাঞ্চলে। শৈশব এবং কিশোর বয়সের পুরো সময়টুকুই কেটেছে ওই চরাঞ্চলে। শৈশবে শহরের আলো-পরিবেশ তিনি খুব একটা দেখেন নি। গ্রামীণ পরিবেশেই তার বেড়ে ওঠা। এখান থেকেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের সিঁড়ি তিনি টপকিয়েছেন।

১৯৮০ সালে নিজ গ্রামের স্কুল বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৩ সালে রায়পুরা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর নিজ জেলা শহর নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে বি.এ এবং ১৯৮৮ সালে বি.এড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন। ছাত্রজীবনের কথা স্মরণ করে তিনি জানান, স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্টে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। ওই এলাকাজুড়ে তখন এই আবদুর রহমানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

এই মেধাবী আবদুর রহমানের সন্তানরাও পিতার সম্মান অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড়ো মেয়ে ফেরদৌসী আক্তার এবং ছোট দুই ছেলে আতিকুর রহমান ও আশিকুর রহমান। ফেরদৌসী আক্তার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আতিকুর রহমান হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে এমবিএ পাস করে বর্তমানে যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের প্রভিশনালি অফিসার পদে কাজ করছেন। আশিকুর রহমান নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের পর এই বুয়েটেই ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।

সন্তানের এমন সফলতায় একজন পিতা হিসেবে আবদুর রহমান নিজেকে সফল এবং ধন্য মনে করেন। চাকরি জীবনে সন্তানের এ অর্জনই তার বড় সঞ্চয় এবং সম্পদ বলে মনে করেন। সন্তানের অর্জনে সারাজীবনের কঠোর পরিশ্রম, সব দুঃখ-কষ্ট সবকিছুই তার কাছে এখন তুচ্ছ।

আমজাদ হোসেন :সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে