শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

দফায় দফায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

  ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০
দফায় দফায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এবার আরেক দফা বাড়ল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে একের পর এক ওষুধের দাম বাড়িয়ে চলছে কোম্পানিগুলো। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে বাজারে। এতে অন্যান্য খরচের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে নাগরিকদের। কিছু অসংক্রামক রোগ আছে, সেগুলোর জন্য রোগীকে সারা বছরই ওষুধ সেবন করতে হয়। বিশেষ করে হৃদ্‌রোগ, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের সারা বছরই ওষুধের ওপর চলতে হয়। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে এসব রোগীর ওপর খরচের চাপ বেড়েছে আরেক দফা। ৮০ টাকার ডলার বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। ডলারের প্রভাবে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়েছে। ফলে ওষুধের দাম বেড়েছে এমন মন্তব্য কোম্পানির কর্মকর্তাদের। তবে ওষুধের দাম বাড়ার পেছনে আগ্রাসী বাণিজ্য ও চিকিৎসকদের কমিশন দেওয়ার প্রবণতাও দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এক ডায়ালগে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওষুধের মোট বাজারের ২৯ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে প্রমোশনাল খাতে। এই ব্যয় মানুষের ঘাড়ে চাপছে। বাণিজ্যিক পণ্যের দাম বাড়বে। তবে ওষুধ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো না। ওষুধের বাজার শতভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে এবং প্রতি বছর যৌক্তিকভাবে দাম সমন্বয় করতে হবে। এটি করা গেলে আগ্রাসী বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং প্রমোশনাল ব্যয় অনেক কমবে।

প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, দেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তির পকেট থেকে ব্যয় হচ্ছে। এই অবস্থায় ওষুধের দাম বাড়ালে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ব্যয় অনেকটা বেড়ে যাবে। দেশে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন বলে মনে করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। কয়েকটি কোম্পানি অনেক প্রভাবশালী। তাদের টপকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ঔষধ প্রশাসনের নেই।

ব্যক্তির মোট চিকিৎসা ব্যয়ের অর্ধেকই খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে। আর এ টাকার ৯৩ ভাগ যাচ্ছে রোগীর পকেট থেকে। ওষুধের পেছনে বছরে গড় খরচ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ছয় ভাগ বিনামূল্যে পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে। সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। তবে এভাবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে লাগামহীন যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তা হলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে