বাড়ল পানির দাম নাগরিকের আর্থিক সক্ষমতাও ভাবতে হবে

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জুলাই মাস থেকে পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, নতুন দরে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি এক হাজার লিটারে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ৪৬ টাকা ২০ পয়সা করে দিতে হবে। এতদিন আবাসিক গ্রাহকরা এক হাজার লিটার পানির জন্য ১৫ টাকা ১৮ পয়সা এবং একই পরিমাণ পানির জন্য বাণিজ্যিক গ্রাহকরা ৪২ টাকা বিল দিয়ে আসছিলেন বলে জানা যায়। আমরা মনে করি, এমনিতেই জীবনযাত্রার ব্যয় নানাভাবে উর্ধ্বমুখী, এর মধ্য যখন পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসছে তখন তার প্রভাব সম্পর্কেও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। জানা যায়, 'মূল্যস্ফীতির সমন্বয়ের লক্ষ্যে' পানির দাম বাড়ানো হয়েছে- যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তথ্য মতে, 'এই সিদ্ধান্ত মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন, নূ্যনতম বিলসহ সব ধরনের (পানি ও পয়ঃ) অভিকরের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।' স্মর্তব্য যে, এর আগে ২০২১ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছিল। ২০২২ সালে ফের পানির দাম বাড়াতে চাইলে সেটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। বিধি প্রণয়ন না করে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে সেসময় রুল জারি করে হাইকোর্ট। যার ফলে, তখন পানির দাম বাড়েনি। এছাড়া ২০২০ সালের এপ্রিলে আবাসিকে প্রতি ইউনিটের দাম বেড়েছিল ২ টাকা ৯০ পয়সা। তার আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ও ২০১৭ সালের আগস্টে পানির দাম বাড়ানো হয়, ঢাকা ওয়াসা যাকে 'মূল্য সমন্বয়' বলে আসছে। আমরা বলতে চাই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টির সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং নগর জীবনের ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। নাগরিকের আর্থিক সক্ষমতা, জীবনযাত্রায় ব্যয়সহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া আবশ্যক। প্রসঙ্গত, এর আগে এই অভিযোগও উঠে এসেছে যে, একাধিকবার পানির দাম বাড়ানো হলেও সেবার মানে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। ফলে সেবার বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই আমরা মনে করি। নাগরিকদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবনার অবকাশ রাখে। অন্যদিকে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেবামূলক ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা জনমনে আস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে জরুরি। ফলে, সেবার মানবৃদ্ধিসহ সার্বিক বিষয়েও নজর দেওয়া সমীচীন। আমরা বলতে চাই, পানির দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক সেটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি ঢাকা ওয়াসাকে পানি উৎপাদনের ব্যয় এবং নগরবাসীকে স্বস্তি দেওয়ার বিষয়েও ভাবতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, পানি একটি মৌলিক সেবা; মূল্যবৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক এবং নাগরিকের আর্থিক সক্ষমতার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ সেটি কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। একইসঙ্গে নানা সময়ে যে অভিযোগ উঠেছে সেগুলোও খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে এবং সেবার মান বাড়ানোর বিষয়টি আমলে নিতে হবে। যে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যর্থতা অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসাকে লাভজনক এবং নাগরিকবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমনটিও কাম্য। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের সামগ্রিক ব্যয় বাড়ার কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে এমনটি বারবার আলোচনায় এসেছে। এখন আবারও পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসছে, তখন মনে রাখা দরকার যে, পানির দাম বাড়ালে নগরবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। ফলে, পানির দাম বৃদ্ধির প্রভাব আমলে নেওয়াসহ সংশ্লিষ্টরা সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন এমনটি প্রত্যাশিত।