শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে ১৮টি ওয়ার্ড কার্যকর পদক্ষেপ নিন

  ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে ১৮টি ওয়ার্ড কার্যকর পদক্ষেপ নিন

দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে- এমন পরিস্থিতি বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি- যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড 'উচ্চ ঝুঁকিতে' রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর বহুতল ভবনেই মশার ঘনত্ব সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীন গত ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চালানো প্রাক-বর্ষা জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আমরা মনে করি, যখন জানা যাচ্ছে যে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি এবং এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড 'উচ্চ ঝুঁকিতে' রয়েছে। তখন এই পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। এটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। উলেস্নখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্য মোতাবেক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এ ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব (ব্রম্নটো ইনডেক্স) পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পাশপাশি ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তর সিটির ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদন্ডের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি। 'ভয়াবহ' হতে পারে ডেঙ্গু- এমন আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়ানো যাবে না। লক্ষণীয় যে, কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, ৩ দিন যাবত ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সারাদেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে রাজধানীর অনেক এলাকা দীর্ঘদিন পানি জমে থাকবে। এতে এডিস মশার লার্ভা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। ছড়িয়ে পড়া লার্ভা যদি ধ্বংস করা না যায় তাহলে অধিক পরিমাণ মশা জন্ম নেবে। আমরা মনে করি, এই বিষয়টিও আমলে নিতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। স্মর্তব্য, এর আগে এমন বিষয় বারবার সামনে এসেছে- বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসাবাড়িসহ নানা জায়গা দেখভাল ভালোভাবে হয় না। এতে এডিসের ঘনত্ব দেখা দেয়। ফলে, এটিও আমলে নিতে হবে। অন্যদিকে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না।

বলা দরকার, কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন অধ্যাপক জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মশা বেশি। সামনের দিনগুলোয় এই মশা আরও বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে জরুরিভাবে মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। এ ছাড়া যেসব বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেসব বাড়িতে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে উড়ন্ত মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। নতুবা ডেঙ্গু রোগী বাড়বে বলেও জানান। ফলে এই দিকগুলো আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিন। সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন। এছাড়া, ডেঙ্গু রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নেরও কোনো বিকল্প নেই। জনসাধারণের সচেতনতা ছাড়া এডিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় এটি বারবার সামনে এসেছে, ফলে সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শুধু চিকিৎসা নিশ্চিত করে প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নাগরিকের জনসচেতনতা সবচেয়ে বেশি বলেও জানা যাচ্ছে। ডেঙ্গু সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসা যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে