শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

অনলাইনে যৌন নির্যাতন শিশুর সার্বিক সুরক্ষা জরুরি

  ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০
অনলাইনে যৌন নির্যাতন শিশুর সার্বিক সুরক্ষা জরুরি

প্রতিনিয়ত নানাভাবে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। আর যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশুরাও। অনলাইনেও শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি এ সম্পর্কিত গবেষণায় যে তথ্য উঠে আসছে তা রীতিমতো ভয়ানক। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটির বেশি শিশু প্রতি বছর অনলাইন যৌন শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সোমবার গুরুতর এই সমস্যার বিষয়ে অনুমান করা প্রথম বৈশ্বিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। আর সেই পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে অনলাইনে শিশু নির্যাতনের এই ভয়াবহ চিত্র। আমরা মনে করি, এই ভয়াবহ চিত্র আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তাদের হাতে নির্মিত হবে আগামীর পৃথিবী, অথচ শিশুদের বেড়ে ওঠা যদি ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে হয়, যদি অনলাইনে যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হয়- তবে তা শুধু ভয়াবহই নয় বরং অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।

তথ্য মতে, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের গবেষকরা দেখেছেন, গত ১২ মাসে বিশ্বের প্রতি আটজনের একজন শিশু যৌন ছবি বা ভিডিও সম্মতিবিহীন গ্রহণ, শেয়ার ও এক্সপোজারের শিকার হয়েছে। আর সংখ্যার দিক থেকে এর পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ। এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের চাইল্ডলাইট গেস্নাবাল চাইল্ড সেফটি ইনস্টিটিউট। সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও অন্য যুবকদের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত সেক্সটিং (যৌন বিষয়ক চ্যাটিং) এবং যৌন ক্রিয়াকলাপের অনুরোধের ক্ষেত্রেও একই সংখ্যক ঘটনা ঘটেছে। এসব অপরাধের মধ্যে তথাকথিত সেক্সটর্শন (অপরাধীরা ছবি গোপন রাখার জন্য ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে) থেকে শুরু করে ডিপফেক ভিডিও ও ছবি তৈরির জন্য এআই প্রযুক্তির অপব্যবহারের মতো বিষয়গুলোও রয়েছে।

আমরা মনে করি, এই ধরনের অপরাধের প্রভাব এবং শিশুরা এর শিকার হতে থাকলে তার পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা আমলে নিতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। উলেস্নখ্য, গবেষণা বলছে, এই সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশেষভাবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সেখানে প্রতি নয়জন পুরুষের একজন কোনো না কোনো সময়ে শিশুদের বিরুদ্ধে অনলাইন অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া চাইল্ড লাইটের প্রধান নির্বাহী পল স্ট্যানফিল্ড বলেছেন, শিশু নির্যাতনের বিষয়বস্তু এতটাই প্রচলিত যে, ওয়াচডগ বা পুলিশিং সংস্থাগুলোর কাছে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে একটি অভিযোগ রিপোর্ট হচ্ছে। তিনি এটাও জানান, এটি বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য মহামারি যা অনেক দিন ধরে লুকিয়ে আছে। এটি প্রতিটি দেশেই ঘটে। এটা ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। এটি বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ প্রয়োজন, বলেও জানিয়েছেন।

আমরা বলতে চাই, যখন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে কিশোরদের বিরুদ্ধে মামলা বাড়ছে। তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) জানিয়েছে, দেশটির শত শত শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীরা যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের জানিয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে অনলাইন প্রতারক বা স্ক্যামাররা অন্য তরুণ বা তরুণী সেজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করে। এরপর তারা এনক্রিপ্ট করা বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপগুলোর মাধ্যমে কথাবার্তা চালায়। সেখানে তারা ভুক্তভোগীদের অন্তরঙ্গ ছবি পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার এক ঘণ্টার মধ্যেই তারা বস্ন্যাকমেইল শুরু করে এবং অর্থ দাবি করতে থাকে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশেও শিশুরা অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে এমন তথ্য বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। আর যখন বৈশ্বিক এই ভয়াবহ চিত্র সামনে এলো, তখন দেশের সংশ্লিষ্টদেরও সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে, শিশুর সার্বিক সুরক্ষায় কাজ করতে হবে। বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটির বেশি শিশু প্রতি বছর অনলাইন যৌন শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে- এই ভয়াবহ চিত্র আমলে নিয়ে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করবে- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে