প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল পুরো শক্তি নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় তান্ডব চালিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ে ঘরবাড়ি, দোকানপাট তছনছ হয়েছে, ভেঙে পড়েছে গাছপালা। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। মোংলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও খেপুপাড়ায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে রেমাল- এমনটি খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। তথ্য মতে, প্রায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলে আছড়ে পড়ে রেমাল। দীর্ঘসময় তান্ডব চালায় দক্ষিণ উপকূলে। এতে উপকূলের অনেক এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে পস্নাবিত হয়েছে সুন্দরবন। সামগ্রিকভাবে উপকূলীল অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
উলেস্নখ্য, গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল- যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে সারাদেশে অন্তত ৬ জনের মৃতু্য হয়েছে বলেও জানা যায়। আমরা বলতে চাই, যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে হলে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ প্রস্তুতি জরুরি। যার ফলে, ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সঙ্গত কারণেই রেমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমলে নেওয়া দরকার, রেমালের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কলাপাড়া, খেপুপাড়া ও কুয়াকাটায়। এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিষখালী-সন্ধ্যা, পায়রা, আন্ধারমানিক, গলাচিপা ও তেঁতুলিয়া নদীর উপচে পড়া পানিতে বরগুনা ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। বরগুনায় তলিয়ে গেছে ২৭ গ্রাম, ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আমতলী ও তালতলী উপজেলার ২৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে উপজেলা নির্বাহী অফিস। বলেশ্বর নদীর পানিতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কয়েকটি এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। বাগেরহাটের বলেশ্বর,পানগুছি-খাসিয়াখালী এবং দড়াটানা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে। এতে শরণখোলা ও মোড়লগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে পস্নাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাগেরহাটে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন বলেও জানা যাচ্ছে। মোংলার শ্যালা নদী ও পশুর নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক উপরে। রাস্তা ভেদ করে জয়মুনি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাতেও রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত এবং সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া, চট্টগ্রামেও রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের খবর জানা গেছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে পস্নাবিত হয়েছে ২১টি গ্রাম। নোয়াখালীর হাতিয়ার বেশ কিছু এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার উপকূল কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে বলেও জানা গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের মানুষের দুর্যোগকে মোকাবিলা করার মতো দৃঢ়তা যেমন আছে, তেমনি বিপদে একে অপরের পাশের দাঁড়ানোর বিষয়টিও স্বাভাবিক। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, বন্যা ও ঝড়সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন অনেক সময় অনিয়মের বিষয়ও সামনে আসে। ফলে, এই বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে আগামী দিনে আরও বেশি প্রস্তুতি যেন গ্রহণ করা যায় এবং যতটা সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়- সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ঘূণিঝড় রেমালের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি আমলে নিতে হবে। যত দ্রম্নত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সহায়তা করতে হবে। অন্যদিকে, প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়েও কাজ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আগামী দিনে আরও বেশি প্রস্তুতি গ্রহণসহ কার্যকর উদ্যোগ ও তার যথার্থ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।