তীব্র গরমে সারাদেশে জনজীবন অতিষ্ঠ। গরমের তীব্রতা কমাতে দেশব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে চলছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এখন রাজধানী থেকে ক্রমান্বয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে বৃক্ষরাজি। ইট কংক্রিটের স্তূপ হয়ে ওঠা মেগাসিটি ঢাকার পার্কগুলো গাছপালা নিধনের জন্য ছায়াঘেরা পরিবেশ হারাচ্ছে নিষ্ঠুরভাবে।
রাজধানীর ব্যস্ততম ফার্মগেট এলাকার মানুষের কাছে শহীদ আনোয়ারা পার্কটি ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। কয়েক বছর আগেও হাজারো মানুষ পার্কটিতে হাঁটাচলা করত সকাল-বিকাল। শিশুরা খেলত মহাউলস্নাসে। কম আয়ের মানুষ ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নিত ছায়াঘেরা পরিবেশে। সবুজ গাছগাছালিতে ভরা ছিল পার্কটি। সময়ের ব্যবধানে সেই পার্কে সবুজের ছিটেফোঁটাও নেই।
রাজধানীতে পার্কের সংখ্যা এমনিতেই কম। সোয়া দুই কোটি জনসংখ্যা অধু্যষিত ঢাকায় যে কয়টি পার্ক আছে তা অনেক দেশের ৫০ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরের চেয়ে কম। নতুন পার্ক তৈরি নয়, সবুজায়নের মাধ্যমে ইট কংক্রিটের নগরীতে প্রাণসঞ্চার এবং যেসব পার্ক আছে সেগুলোর পরিবেশও ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
গাছ আমাদের পরিবেশের একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বা অন্য কোথাও নতুন বৃক্ষরোপণ ছাড়াই গাছ কেটে ফেললে আমাদের সবার ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে।
যদি কোনো কারণে গাছ কাটতে হয়, তবে তা অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবং যথাযথ অনুমোদন ও ঘাটতি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে করা উচিত। পাশাপাশি বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই একটি বার্তা দিতে হবে। বলতে হবে, তাদের পরিবেশ আইন তেমনভাবেই মেনে চলতে হবে, যেমনটি সাধারণ নাগরিকের কাছে প্রত্যাশা করা হয়। যারা তা করতে ব্যর্থ হবে, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও পথচারীরা। তাদের দাবি, নির্বিচারে গাছ কাটার কারণেই প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, তীব্র তাপদাহ চলছে।
উলেস্নখ্য, দেশের ভৌগোলিক সীমানার ২৫ ভাগ বনভূমির প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে মাত্র ৯ ভাগ। যত্রতত্র বেআইনিভাবে গাছ কাটায় প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাবসহ ঘটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ পথচারীদের সুশীতল ছায়াদানকারী গাছগুলো না কাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
একটি আদর্শ নগরীর মানদন্ড অনুযায়ী ২০-২৫ শতাংশ সবুজায়ন থাকা জরুরি। কিন্তু ঢাকা শহরে সবুজায়ন আছে মাত্র ৭-৮ শতাংশ। সবুজায়ন কমে যাওয়ায় নাগরিকরা বহুমাত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। শারীরিক ও মানসিক, দাবদাহ ও দূষণ কমাতে সবুজায়ন জরুরি। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে বেশি বেশি। তাই গাছ লাগানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
দাবদাহ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে, লেকপাড়, পার্ক ও মাঠ, রাস্তা ও উন্মুক্ত স্থান বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থা বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে গাছ লাগাতে হবে। একই সঙ্গে বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিকভাবে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকা শহরের তাপমাত্রার চেয়ে আশপাশের জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি কম থাকে। এর প্রধান কারণ সবুজায়নের মাত্রা কমে কংক্রিটের শহরে পরিণত হওয়া। একই সঙ্গে ঢাকা শহর বেশিরভাগ সময় দূষণের শীর্ষে থাকে। এ ছাড়া কয়েকদিন আগেও ঢাকা শহর দাবদাহের রেকর্ড ভেঙেছে- যার প্রধান কারণ সবুজায়ন কমে যাওয়া। এই সবুজায়ন কমে যাওয়ায় শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ।
পরিবেশ রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে গণহারে গাছ লাগাতে হবে। রাস্তার পাশে, অফিস-আদালতের সামনে, খালপাড়ে, পার্ক ও মাঠসহ উন্মুক্ত স্থানে গাছ লাগাতে হবে। যত বেশি সবুজায়ন করা যাবে নগরবাসী দ্রম্নত দাবদাহ, দূষণ ও শারীরিক অসুস্থতা থেকে রেহাই পাবে।
একটি নগরের মধ্যে তিনটি বিষয়ে ভারসাম্য থাকতে হবে। সবুজ এলাকা, কংক্রিট এলাকা ও জলাশয়। সবুজ এলাকা থাকতে হয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। জলাশয় থাকতে হয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আর কংক্রিট এলাকা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ থাকতে পারে। ঢাকা শহরে ৩০ বছর আগেও যে পরিমাণ সবুজ এলাকা ছিল, এখন তার চার ভাগের এক ভাগও নেই। দিন দিন বিলীন হচ্ছে সবুজ এলাকা ও জলাশয়। তাই এলাকাভিত্তিক পার্ক, খেলার মাঠ বা অন্য সবুজায়নের বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে।
মো. খসরু চৌধুরী : সংসদ সদস্য, ঢাকা-১৮, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ