জঙ্গিবাদ বড় ধরনের বৈশ্বিক সংকট। সঙ্গত কারণেই এই সংকট নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ জারি রাখা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা 'শাহাদাত' নামে নতুন গ্রম্নপ তৈরি করে সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছিল এমন তথ্য সামনে এসেছে। গত শুক্রবারর্ যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ওর্ যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে ওই গ্রম্নপের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তান ও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শনিবার দুপুরের্ যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক।
আমরা মনে করি, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা নতুন গ্রম্নপ তৈরি করে যে কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাতে তৎপর হলে সেটি যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই, তেমনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। জানা গেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আনসার আল ইসলামের সদস্য। বর্তমানে তারা শাহাদাত নামে নতুন গ্রম্নপ তৈরি করে সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম চালাত। আর ওই গ্রম্নপের সদস্য সংখ্যাও শতাধিক। এই তথ্যও সামনে এসেছে যে, এই গ্রম্নপ এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। গ্রম্নপের অন্যান্য সদস্য অবস্থান করছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। উলেস্নখ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, দুই আঞ্চলিক প্রশিক্ষক জিহাদ হোসেন ওরফে হুজাইফা ও আমিনুল ইসলাম।র্ যাবের মুখপাত্র জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার ইসমাইল নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিসে অধ্যয়নরত। এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে সে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতো। একপর্যায়ে তাকে সংগঠনের রিক্রুটিং শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর জিহাদ একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। সেও প্রায় এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি গ্রম্নপের বিদেশে অবস্থানরত এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয় সূত্রে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। পরে সে সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়। অন্যদিকে, গ্রেপ্তার আমিনুল পেশায় একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। প্রায় ছয় মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয়সূত্রে সেও সংগঠনে যোগ দেয়। পরে সে তার নিজ এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। একপর্যায়ে সে সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।
আমরা বলতে চাই, কোনো জঙ্গি সংগঠন বা উগ্রপন্থিরা যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, কিংবা তাদের তৎপরতা চালাতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সামগ্রিকভাবে জঙ্গিবাদকে রুখতে হবে। স্মর্তব্য যে, বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জঙ্গিরা নতুন নতুন সদস্য রিক্রুট করতে অনলাইনে প্রচারণা চালায় বলেও এর আগে জানা গিয়েছিল। আমরা মনে করি, জঙ্গিবাদকে রুখতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। আরও বেশি সতর্কতামূলক ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ্যণীয়, নানা সময়ে এমন খবর সামনে এসেছে যে- বিভিন্নভাবেই জঙ্গিরা সদস্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে, সরলতার সুযোগ নিয়ে বিভ্রান্ত করতে চায়। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখেও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশকে অস্থিতিশীল করতে কিংবা যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে যারা তৎপর তাদের রুখতে হবে। জঙ্গিবাদ নির্মূলে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না এটা সম্প্রীতির দেশ। এ দেশের মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে। জঙ্গিরা সদস্য সংগ্রহে যেভাবেই উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করুক সেটাও রুখতে হবে। এবারে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করার পাশাপাশি, জঙ্গিদের যে কোনো ধরনের তৎপরতা রোধ করতে হবে। জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং সার্বিকভাবে জঙ্গিবাদের ব্যাপারে সদা-সতর্ক থাকা ও প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।