দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুলস্নাহ বলেছেন, 'নিজের মধ্যে দুর্নীতি রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সম্ভব হলেও সেটি টেকসই হবে না। সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে সমাজ থেকে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হবে। শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি কমানো যাবে না। দুর্নীতি হ্রাস করতে হলে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।' শনিবার হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আয়োজিত 'দুর্নীতি দমনে নাগরিকদের ভূমিকা' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে যেসব দুর্নীতি হয়, দুদকের একার পক্ষে সেগুলো দেখা সম্ভব নয়। বিদেশে মন্ত্রী-সচিবরা দুর্নীতির টাকায় বাড়ি করেছে, এটা বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিদেশে ওইসব বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা দরকার। ওইসব ঠিকানা পাওয়া গেলেই দুদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিশেষ অতিথি সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারী বলেন, ব্যাংক থেকে বৃহৎ অঙ্কের ঋণ নিয়ে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং করে অবাধে অর্থ পাচার হচ্ছে। বৃহৎ দুর্নীতিগুলো বন্ধ করা গেলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। বাংলাদেশ এক সময় দুর্নীতির জন্য পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দুর্নীতির সেই কলঙ্কতিলক মোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য যে, আমরা সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারিনি। যার কারণে আমাদের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তার রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি। ইতোমধ্যে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, দুর্নীতি না হলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত।
বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা অনেক কঠিন কাজ। এ জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। অসম ও অসুস্থ পুঁজির বিকাশের কারণেই সমাজে ধন-বৈষম্য বেড়েছে। সমাজের এক শ্রেণির মানুষ ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতে পারছে না অন্য এক শ্রেণির মানুষ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে। তাদের ঘরে টাকার পাহাড়। তাদের টাকা রাখার জায়গা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কত টাকা প্রয়োজন। দেশের সবাই যদি অবৈধভাবে কোটিপতি হতে চায় তা হলে এটা রাষ্ট্রের জন্য একটা বিপজ্জনক বার্তা।
দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ। বাংলাদেশের সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নিজস্ব আর্থিক সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যের তালিকা আরও বেশি দীর্ঘ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যদিও সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে- এটা স্বীকার করতেই হবে। দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারা এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। তবে হতাশ হলে চলবে না, চলবে না মনোবল হারালেও। আমাদের দৃঢ়চেতা মানসিকতা নিয়ে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নির্মূল করতে হবে দুর্নীতি।