শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

আমানতে অনিশ্চয়তা

কার্যকর উদ্যোগ জরুরি
  ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০
আমানতে অনিশ্চয়তা

বর্তমান বিশ্বে ব্যাংক খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই এই খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, যদি ব্যাংকে টাকা রেখে আমানতকারীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন বা ক্ষতির শিকার হন তবে তা কতটা উদ্বেগের- তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, ব্যাংকে টাকা রেখে দেশের আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির গতির সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাংকে রাখা আমানতের সুদহার বাড়েনি বলেও জানা যাচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে মানুষ মুনাফা তো পাচ্ছেই না, উল্টো ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়।

লক্ষণীয় যে, এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আগে পলিসি ঠিক করে কঠোর সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তা না হলে দেশে বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। মূলত ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) করা এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সামনে কী' শীর্ষক এক সেমিনারে ওই গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। আমরা বলতে চাই, একদিকে ব্যাংকে টাকা রেখে দেশের আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এটা যেমন সামনে আসছে, অন্যদিকে, আর্থিক ঝুঁকির আশঙ্কার বিষয়টিও আলোচনায় আসছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা।

উলেস্নখ্য, সিপিডি বলছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে ব্যাংকে টাকা রেখে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। অর্থাৎ প্রায় চার বছর ধরে ব্যাংকে আমানত রেখে মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জানা গেছে, ব্যাংকে আমানত রেখে সর্বশেষ মুনাফা পাওয়া গেছে ওই বছরের ফেব্রম্নয়ারি মাসে। পরের মাস মার্চে আমানতের প্রকৃত সুদহার ছিল শূন্য। এছাড়া সিপিডির হিসাব মতে, ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে ব্যাংক আমানতের প্রকৃত সুদহার ছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। মার্চে তা শূন্যের কোটায় নামার পর ২০২৪ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকৃত সুদহার ঋণাত্মক। ২০২২ সালের আগস্ট ও ২০২৩ সালের মে মাসে তা সর্বোচ্চ মাইনাস ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছিল। এরপর মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে তা সব সময় ওঠানামা করেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে আমানতের সুদহার ছিল মাইনাস ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

আমলে নেওয়া দরকার, তথ্য মতে, সুদহার ৬-৯ করার পর ঋণের সুদহারের পাশাপাশি আমানতের সুদহারও কমে গিয়েছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে মেয়াদি আমানতের সুদহার নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বলা হয়, আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হবে না। কিন্তু অনেক ব্যাংকই তা দিতে পারেনি। এরপর ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয় এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমানতের সুদহারের সীমাও তুলে নেওয়া হয়। এরপর ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়িয়েছে। এখন আবার অনেক ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করতে সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু সিপিডির এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় চার বছর ধরে মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখে ক্ষতির মুখে পড়ছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিতে হবে। এমনটিও আলোচনায় এসেছে যে, ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চরম অবনতি হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যাংক খাতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এ প্রবণতা আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করছে। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে এবং পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমানতকারীদের মধ্য আস্থাহীনতা, কিংবা ব্যাংকে আমানত রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন- এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে একইসঙ্গে ব্যাংক খাতের অগ্রগতি বজায় রাখতে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে