জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি, নির্মল পৃথিবী গড়ি

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০

ওমর ফারুক ইমন
আজ ২২ মে ২০২৪ বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। জীববৈচিত্র্য বলতে বুঝায় পৃথিবীর জীবসমূহের মধ্যে জৈবিক বৈচিত্র্যতা ও পরিবর্তনশীলতা, যা পৃথিবীর মাটি, পানি ও বায়ুতে বসবাসকারী উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবের (ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, অ্যামিবা) মধ্যে জিনগত, প্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক আন্তঃসম্পর্ক নির্দেশ করে। জীব, উদ্ভিদ, অনুজীব কোনো অঞ্চলে পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমে বৈচিত্র্যতা ফুটিয়ে তুলে। জীববৈচিত্র্যকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য। একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির মধ্যে প্রাপ্ত জিনের তারতম্যকে জিনগত বৈচিত্র্য অথবা এবহবঃরপ ঠধৎরধনরষরঃু বলা হয়। সাধারণ মিউটেশন বা পরিব্যাপ্তি জিনগত বৈচিত্র্য ঘটায়। অন্যদিকে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বলতে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে উদ্ভিদ ও জীবসমূহের প্রজাতিগত বিভিন্নতা বোঝায়। আবার বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য হলো- একটি বিরাট অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্নতা। এই জীববৈচিত্র্যই পৃথিবীকে মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য করে তোলে। জীববৈচিত্র্য পৃথিবীর জন্য স্রষ্টা কর্তৃক প্রদানকৃত অপার এক আশির্বাদ। এই জীববৈচিত্র্য পৃথিবীকে অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে। জীব সম্প্রদায় ও উদ্ভিদ প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে জীববৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শক্তির নিত্যতার মতে যেমন শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, শুধু একরূপ থেকে অন্যরূপে রূপান্তরিত হয়, তেমনিভাবে জীববৈচিত্র্যও যেন শক্তির নিত্যতা মেনে চলে, কারণ জীববৈচিত্র্য আছেই বলেই পরিবেশে শক্তির প্রবাহ চলে। জীববৈচিত্র্য জীব, অনুজীব ও কীটপতঙ্গের মধ্যে খাদ্য-খাদকের আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলে, যার ভিত্তিতে প্রাণী ও কীটপতঙ্গ বাঁচে। বাংলাদেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ হলো- ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (সুন্দরবন)। সুন্দরবনে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং আটটি উভচর প্রাণী রয়েছে। তাদের মধ্যে দারুণ পারস্পরিক সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। সহস্রাধিক মানুষ তাদের জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়াও বঙ্গপোসাগরে উৎপন্ন হওয়া ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সুনামীসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করছে সুন্দরবন। এ ছাড়াও সুন্দরবনসহ অ্যামাজনের মতো জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো পৃথিবীর প্রায় ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে ওজনস্তরকে রক্ষা করছে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখছে। অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের অঞ্চলগুলো অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। দেশ-বিদেশের অনেক প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে জীববৈচিত্র্যের সৌন্দর্য অবলোকন করতে। এতে করে দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। বাংলাদেশে টাঙ্গুয়ার হাওড়, হাকালুকি হাওড়, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সুন্দরবন ইত্যাদি অঞ্চলগুলো জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উদাহরণ। এই অঞ্চলগুলো থেকে প্রতিবছর প্রচুর মাছ সংগ্রহ করা হয়, যা আমাদের অনেকখানি আমিষের চাহিদাও পূরণ করে। বিভিন্ন ঋতুতে অতিথি পাখিদের আগমন এই অঞ্চলগুলোকে সৌন্দর্যের চরম শেকড়ে পৌঁছায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, সমগ্র পৃথিবীতে অক্সিজেন উৎপাদনের অন্তত অর্ধেক কিংবা অর্ধেকেরও বেশি শতাংশ সমুদ্র থেকে আসে। আবার এই উৎপাদনের বেশিরভাগই সামুদ্রিক পস্ন্যাঙ্কটন থেকে আসে; যেমন- প্রবাহিত উদ্ভিদ, শৈবাল এবং কিছু ব্যাকটেরিয়া, যারা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। উপরোক্ত সব কিছুই সম্ভব শুধুমাত্র জীববৈচিত্র্যের কারণে। কিন্তু দিন দিন জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অধিক রাসায়নিক ও কীটনাশক সারের প্রয়োগ, অধিকহারে নগরায়ন, বন-জঙ্গল উজাড়করণ, নদীর নাব্য হ্রাস, কলকারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্য পদার্থ জীববৈচিত্র্যের ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ। যার ফলে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু ও বাস্তুতন্ত্র। ফলশ্রম্নতিতে দেখা যাচ্ছে, প্রাণীগুলো পাচ্ছে না তাদের উপযুক্ত প্রজনন অঞ্চল। এ ছাড়াও প্রাণী জগৎ হারাচ্ছে তাদের অভিযোজন ক্ষমতা, ফলস্বরূপ বিলুপ্ত ঘটছে অনেক জীব প্রজাতির। পানি দূষণের কারণে পানির পস্নাংকটন হ্রাস, ডিজলভস অক্সিজেন (উঙ) মাত্রা হ্রাসের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। যার কারণে বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টিপ্রবাহ বিনষ্ট হচ্ছে। তাই আমাদের পৃথিবীর নির্মলতা ও নান্দনিকতা টিকিয়ে রাখতে জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতাই পারে আমাদের হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে। ওমর ফারুক ইমন শিক্ষার্থী কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়